ড. লোকমান খান 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারী প্রবণতার এক নিরন্তর সংগ্রামের সাক্ষী। স্বাধীনতার পর থেকে, দেশটি বারবার সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, যার মধ্যে সংসদীয় থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত এবং সামরিক শাসন অন্তর্ভুক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর থেকে, সংসদীয় ব্যবস্থার অধীনে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ, কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এবং বিচার বিভাগ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কথিত কারচুপির কারণে গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণ ঘটেছে। এই প্রবণতাগুলো একটি ‘ডমিন্যান্ট-পার্টি সিস্টেম’ বা প্রভাবশালী-দলীয় ব্যবস্থার দিকে দেশকে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে ক্ষমতাসীন দল নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করে এবং জবাবদিহিতা কমে যায়।

২০২৪ সালের গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন একটি নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা প্রবল। তবে, এই পরিবর্তন সত্ত্বেও, দেশের গভীর বিভাজন, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের নেটওয়ার্ক এবং উগ্রবাদী শক্তির উত্থান (যেমন কট্টরপন্থী ইসলামী দলগুলো) নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, ফ্যাসিবাদী প্রবণতা রোধ এবং একটি স্থিতিশীল, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাসিবাদ কেবল একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যক্তি বা দলের হাতে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে নাগরিক স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার হরণের একটি প্রক্রিয়া, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে।

এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রপতি শাসিত এবং সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার মৌলিক পার্থক্য, তাদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা। বিশেষভাবে, রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় ক্ষমতা পৃথকীকরণ এবং চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের প্রক্রিয়া কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে এবং ফ্যাসিবাদী প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারে, তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সংসদীয় ব্যবস্থার অধীনে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা বিবেচনা করে, এই নিবন্ধ দৃঢ়ভাবে যুক্তি দেবে যে, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ এবং একটি স্থিতিশীল ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। এই ব্যবস্থা ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধ করে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় শাখার মধ্যে কার্যকর ভারসাম্য নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও, এটি বারবার কর্তৃত্ববাদী প্রবণতায় ফিরে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরে আসার পরও, শেখ হাসিনার শাসনামলে (২০০৯-২০২৪) গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণ ঘটেছে। এর মূল কারণ হিসেবে সংসদীয় ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়াকে চিহ্নিত করা যায়। সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাহী ও আইনসভার ক্ষমতার ফিউশন এবং ‘উইনার-টেক-অল’ নির্বাচন পদ্ধতি প্রায়শই ক্ষমতাসীন দলকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। যখন একটি দল আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, তখন কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এবং জবাবদিহিতার অভাব তৈরি হয়। এই পরিস্থিতি ক্ষমতাসীন দলকে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার সুযোগ দেয়, যা ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ এবং স্বৈরাচারী প্রবণতার জন্ম দেয়। এই চক্রাকার প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণের একটি অন্তর্নিহিত ঝুঁকি রয়েছে, যা সংসদীয় ব্যবস্থার নকশার একটি মৌলিক ত্রুটি দ্বারা আরও প্রকট হয় এবং ফ্যাসিবাদী প্রবণতার জন্ম দিতে পারে। এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করে এবং রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার জন্ম দেয় , যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে বাধা দেয়।

রাষ্ট্রপতি শাসিত ও সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা: মৌলিক পার্থক্য

রাষ্ট্রপতি শাসিত এবং সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা দুটি ভিন্ন মডেল, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বন্টন এবং নির্বাহী ও আইনসভার সম্পর্ক নির্ধারণে মৌলিক পার্থক্য প্রদর্শন করে।

নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি

সংসদীয় ব্যবস্থায় ভোটাররা আইনসভার (পার্লামেন্ট) প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। এরপর আইনসভা তার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করে, যিনি সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন। অর্থাৎ, জনগণ সরাসরি সরকারপ্রধানকে নির্বাচিত করে না, বরং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সরকারপ্রধান নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় ভোটাররা আইনসভা থেকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে রাষ্ট্রপতিকে সরাসরি নির্বাচিত করেন। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন, যারা আইনসভার নির্বাচিত সদস্য নন। আইনসভার সদস্যরাও নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হন। এটি রাষ্ট্রপতিকে একটি শক্তিশালী জনপ্রিয় ম্যান্ডেট প্রদান করে। এই প্রত্যক্ষ ম্যান্ডেট রাষ্ট্রপতিকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তি প্রদান করে, যা তাকে আইনসভার প্রতিদিনের সমর্থন ধরে রাখার উপর কম নির্ভরশীল করে তোলে। এর ফলে, রাষ্ট্রপতি নীতি বাস্তবায়নে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। এই স্বাধীনতা তাকে দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ব্যাপক জাতীয় স্বার্থে কাজ করার সুযোগ দেয়। এই ক্ষমতা ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ একজন জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে স্বৈরাচারী প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। তবে, একই সাথে, এই শক্তিশালী ম্যান্ডেট যদি চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স দুর্বল হয়, তবে ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীভূতকরণের ঝুঁকিও তৈরি করে। এটি একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য, যেখানে শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ঝুঁকির মধ্যে একটি টানাপোড়েন থাকে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র অবিশ্বাস এবং সংঘাত বিদ্যমান, সেখানে একজন সরাসরি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি একটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হতে পারেন এবং দলীয় বিভাজন কমাতে সাহায্য করতে পারেন। তবে, এর জন্য সাংবিধানিক সুরক্ষা এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য।

ক্ষমতা বন্টন

সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাহী (প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা) তাদের ক্ষমতা নির্বাচিত আইনসভা থেকে প্রাপ্ত হয় এবং আইনসভার কাছে জবাবদিহি করে । নির্বাহী ও আইনসভার মধ্যে ক্ষমতার মিশ্রণ (fusion of powers) দেখা যায়, যেখানে মন্ত্রিসভার সদস্যরা সাধারণত আইনসভারও সদস্য হন। এর অর্থ হলো, ক্ষমতার একটি অংশ আইনসভা এবং নির্বাহীর মধ্যে একীভূত থাকে।

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় নির্বাহী ও আইনসভা শাখাগুলো সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বাধীন। ক্ষমতা তিনটি স্বতন্ত্র শাখায় (নির্বাহী, আইনসভা, বিচার বিভাগ) বিভক্ত থাকে। এই পৃথকীকরণের উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধ করা এবং প্রতিটি শাখার মধ্যে চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের ব্যবস্থা রাখা।

নির্বাহী ও আইনসভা সম্পর্ক

সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাহী সরাসরি আইনসভার কাছে জবাবদিহি করে। আইনসভা অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে অপসারণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে ক্ষমতায় থাকতে আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন বজায় রাখতে হয়। আইন প্রণয়ন সাধারণত নির্বাহী বিভাগ (সরকারি বিল) দ্বারা শুরু হয়। যদি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ আইন আইনসভা দ্বারা “ভোট ডাউন” হয়, তবে এটি অনাস্থা ভোট হিসেবে বিবেচিত হয়।

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য দায়িত্ব পালন করেন এবং আইনসভা তাকে অপসারণ করতে পারে না, কেবল ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে (যেমন অভিশংসন) ছাড়া। আইনসভা সরাসরি রাষ্ট্রপতির মন্ত্রিসভার সদস্যদের অপসারণ করতে পারে না। রাষ্ট্রপতি আইনসভা দ্বারা পাসকৃত আইনে ভেটো দিতে পারেন, এবং আইনসভা দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ভেটো বাতিল করতে পারে। আইন প্রণয়ন নির্বাহী বা আইনসভা উভয় শাখা থেকেই শুরু হতে পারে।

রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের ভূমিকা

সংসদীয় ব্যবস্থায় সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান (যেমন রাজা বা আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপতি) একটি আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিত্ব হন, যিনি দেশের কূটনৈতিক কার্যক্রমে প্রতিনিধিত্ব করেন। সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী) নির্বাহী সিদ্ধান্ত এবং নীতি বাস্তবায়নের জন্য দায়ী থাকেন। এই দুটি ভূমিকা পৃথক থাকে।

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একই সাথে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান উভয়ই হন। তিনি সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। এই সমন্বিত ভূমিকা তাকে একটি শক্তিশালী এবং দৃশ্যমান নেতৃত্ব প্রদান করে।

সারণী: রাষ্ট্রপতি শাসিত বনাম সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা: একটি তুলনামূলক চিত্র

বৈশিষ্ট্য (Feature)রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা (Presidential System)সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা (Parliamentary System)
নেতৃত্ব নির্বাচনরাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন।প্রধানমন্ত্রী আইনসভা দ্বারা নির্বাচিত হন।
ক্ষমতা বন্টননির্বাহী, আইনসভা, বিচার বিভাগের সুস্পষ্ট পৃথকীকরণ।নির্বাহী ও আইনসভার ক্ষমতার মিশ্রণ (fusion)।
নির্বাহী-আইনসভা সম্পর্কস্বাধীন ও চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স ভিত্তিক।পরস্পরের প্রতি জবাবদিহিমূলক ও আস্থা-নির্ভর।
রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধানরাষ্ট্রপতি উভয় ভূমিকা পালন করেন।রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের ভূমিকা পৃথক।
স্থায়িত্বনির্দিষ্ট মেয়াদের কারণে অধিক স্থিতিশীল।অনাস্থা ভোটের কারণে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা।
জবাবদিহিতাজনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি।আইনসভার কাছে সরাসরি জবাবদিহি।
নীতি ধারাবাহিকতাদীর্ঘমেয়াদী নীতি বাস্তবায়নে সহায়ক।স্বল্পমেয়াদী নীতি ও ঘন ঘন পরিবর্তন।
গ্রিডলক/অস্থিরতাগ্রিডলকের সম্ভাবনা।ঘন ঘন সরকার পতনের ঝুঁকি।

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা তার নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে, যা এর শক্তি এবং দুর্বলতা উভয়ই নির্ধারণ করে।

শক্তি

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪ বছর, মেক্সিকোতে ৬ বছর) এবং আইনসভার দ্বারা সহজে অপসারিত হতে পারেন না, কেবল অভিশংসনের মতো ব্যতিক্রমী ও কঠিন প্রক্রিয়া ছাড়া। এটি সরকারকে স্থিতিশীলতা প্রদান করে এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে। সংসদীয় ব্যবস্থার মতো অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে সরকারের আকস্মিক পতনের ঝুঁকি থাকে না। এই স্থিতিশীলতা বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন নীতিগত অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।

এই ব্যবস্থায় নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সুস্পষ্ট পৃথকীকরণ থাকে। প্রতিটি শাখা একে অপরের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পারে (চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স), যা ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সহায়ক। রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি করেন, যা তাকে একটি স্পষ্ট গণতান্ত্রিক বৈধতা দেয়। এই প্রত্যক্ষ জবাবদিহিতা জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে, যা সংসদীয় ব্যবস্থার পরোক্ষ নির্বাচনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হতে পারে।

এছাড়াও, একজন রাষ্ট্রপতি, তার ক্ষমতার পরিধির মধ্যে, সংসদীয় ব্যবস্থার চেয়ে দ্রুত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন, কারণ তাকে আইনসভার প্রতিদিনের সমর্থন বজায় রাখার জন্য কম সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। এটি সংকটকালীন সময়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধা প্রদান করে, যা জাতীয় নিরাপত্তা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্বলতা

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার একটি প্রধান দুর্বলতা হলো গ্রিডলকের সম্ভাবনা। যদি রাষ্ট্রপতি এবং আইনসভা ভিন্ন রাজনৈতিক দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় (বিভক্ত সরকার), তবে নীতিগত অচলাবস্থা (gridlock) দেখা দিতে পারে, যা আইন প্রণয়ন এবং সমঝোতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি সরকারের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে এবং জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে। এই গ্রিডলক আসলে ক্ষমতার পৃথকীকরণের একটি উপজাত। এটি এক অর্থে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধ করে, কারণ কোনো একটি শাখা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটি একটি ইচ্ছাকৃত নকশা যা ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধ করে। তবে, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে যেখানে রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র এবং সমঝোতার সংস্কৃতি দুর্বল, সেখানে এই গ্রিডলক সরকারের কার্যকারিতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা ফ্যাসিবাদী প্রবণতার জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। এই পরিস্থিতি ভোটারদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তী নির্বাচনে ভিন্ন দলকে ক্ষমতায় আনতে উৎসাহিত করে, কিন্তু এটি দ্রুত ফলাফল দিতে ব্যর্থ হলে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে । তাই, একটি কার্যকর রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার জন্য কেবল কাঠামোগত নকশা নয়, বরং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সংস্কৃতি এবং সাংবিধানিক নিয়মকানুন মেনে চলার সদিচ্ছা অপরিহার্য। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে যে, রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা গ্রহণের পর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যাতে গ্রিডলক এড়ানো যায় এবং সরকার কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

এছাড়াও, একজন অজনপ্রিয় বা অকার্যকর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা অত্যন্ত কঠিন। অভিশংসন প্রক্রিয়া সাধারণত জটিল এবং বিরল, যার জন্য আইনসভায় উচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়। এটি একটি দুর্বল বা অকার্যকর নেতৃত্বকে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দিতে পারে, যা জনগণের অসন্তোষ বাড়াতে পারে।

যদিও ক্ষমতার পৃথকীকরণ একটি সুবিধা, তবে এটি রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীভূতকরণের ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স দুর্বল হয় বা রাষ্ট্রপতি নির্বাহী আদেশ (executive orders) ব্যবহার করে আইনসভাকে পাশ কাটিয়ে যান। একজন শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি, বিশেষ করে সংকটকালীন সময়ে, তার ক্ষমতাকে অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিতে পারেন।

সংসদীয় ব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা

সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা, তার নিজস্ব কার্যপ্রণালী এবং কাঠামোর কারণে, কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা এবং অসুবিধার সম্মুখীন হয়।

শক্তি

সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা আইনসভার কাছে সরাসরি জবাবদিহি করেন এবং অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে যেকোনো সময় অপসারিত হতে পারেন। এটি সরকারকে জনগণের ইচ্ছার প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে এবং দ্রুত নেতৃত্ব পরিবর্তনে সক্ষমতা দেয়, যখন কোনো সরকার অজনপ্রিয় বা অকার্যকর প্রমাণিত হয়। যেহেতু নির্বাহী আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে গঠিত হয়, তাই আইন প্রণয়ন ও নীতি বাস্তবায়নে সাধারণত কম ঘর্ষণ হয়। এটি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নীতি বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে, কারণ সরকার আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন উপভোগ করে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষকে সরকারের অংশ হওয়ার সুযোগ দেয়, অর্থাৎ দেশের নাগরিকদের নিজেদের দেশ শাসন করার সুযোগ দেয়, কারণ তারা তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থায় (proportional representation) ক্ষুদ্র দলগুলোর আইনসভায় প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে, যা ভোটারদের বৈচিত্র্যপূর্ণ পছন্দকে আরও সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে।

দুর্বলতা

সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাহী ও আইনসভার মধ্যে ক্ষমতার সুস্পষ্ট পৃথকীকরণের অভাব থাকে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণ হতে পারে, কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আইনসভায় তাদের অবস্থান ব্যবহার করে নির্বাহী ক্ষমতাকে স্বেচ্ছাচারী করতে পারে। অনাস্থা ভোটের সম্ভাবনা ঘন ঘন সরকার পরিবর্তনে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় রূপ নিতে পারে । জোট সরকারগুলো বিশেষত ভঙ্গুর হতে পারে। সরকারের অনিশ্চিত মেয়াদ এবং ঘন ঘন নির্বাচন বা জোট পরিবর্তনের সম্ভাবনা দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাধা দেয়। এটি নীতিগত ধারাবাহিকতাকে ব্যাহত করে।

প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন না, বরং আইনসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। এটি কিছু ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বৈধতার ঘাটতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ জনগণ সরাসরি তাদের সরকারপ্রধানকে বেছে নিতে পারে না। যদি ক্ষমতাসীন দল আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং দলীয় শৃঙ্খলা কঠোরভাবে প্রয়োগ করে, তবে কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা সীমিত হয়ে পড়ে, যা সরকারের স্বেচ্ছাচারিতাকে উৎসাহিত করতে পারে এবং জবাবদিহিতা হ্রাস করে ।

সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাহীর আইনসভার প্রতি জবাবদিহিতা একটি শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। আইনসভা অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করতে পারে। তবে, একই সাথে, ক্ষমতার ফিউশন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আধিপত্য প্রায়শই আইনসভাকে নির্বাহীর ‘রাবার স্ট্যাম্পে’ পরিণত করে, যা কার্যকর জবাবদিহিতাকে ব্যাহত করে। এই আপাত স্ববিরোধিতা ইঙ্গিত দেয় যে, সংসদীয় ব্যবস্থার কাঠামোগত নকশা, বিশেষ করে দুর্বল প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রেক্ষাপটে, দ্রুত কর্তৃত্ববাদের দিকে ধাবিত হতে পারে। যখন আইনসভা নিজেই নির্বাহীর অংশ হয়ে যায়, তখন অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নিজেদেরই প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় না। এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়। এটি সংসদীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, কারণ ক্ষমতা একীভূত হওয়ার ফলে একনায়কত্বের জন্ম হতে পারে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, যেখানে ক্ষমতাসীন দল প্রায়শই বিরোধী দলকে দমন করে এবং আইনসভায় নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, যার ফলে প্রকৃত বিরোধী দলের অভাব দেখা যায় । এই পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে এবং জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করে, যা দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার ভূমিকা

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তিনটি স্বতন্ত্র শাখায় বিভক্ত থাকে: নির্বাহী, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ।

বিচার বিভাগ, আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের ভূমিকা

নির্বাহী বিভাগ: রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব

রাষ্ট্রপতি একই সাথে সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান উভয়ই হন, যা তাকে শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রদান করে এবং জাতীয় নীতি বাস্তবায়নে একক কর্তৃত্ব দেয়। তিনি আইন প্রণয়নে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, যা আইনসভাকে নতুন আইন পাসে সতর্ক করে। বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা দেয়। তিনি নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা ও বিচারকদের নিয়োগ দেন, যা সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষে হয়, এটি ক্ষমতার একটি চেক। জরুরি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা সংকটকালীন সময়ে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আইনসভা: আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ আইনসভা আইন প্রণয়ন করে এবং রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করে। রাষ্ট্রপতির ভেটো বাতিল করার ক্ষমতা রাখে (সাধারণত দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে), যা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উপর একটি চেক। আইনসভা রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন (যেমন মন্ত্রিসভার সদস্য, রাষ্ট্রদূত, এবং ফেডারেল বিচারক) অনুমোদন করে, যা নির্বাহী নিয়োগে আইনসভার সম্মতি নিশ্চিত করে। এটি রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের অভিশংসন ও অপসারণ করতে পারে, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি চূড়ান্ত রক্ষাকবচ। আইনসভা নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রমের উপর তদারকি (oversight) করে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।

বিচার বিভাগ: সংবিধান ব্যাখ্যা ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা বিচার বিভাগ সংবিধান ও আইনের ব্যাখ্যা করে এবং বিতর্কিত বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা প্রয়োগ করে। আইনসভা দ্বারা প্রণীত আইন বা নির্বাহী আদেশকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে (জুডিশিয়াল রিভিউ), যা নির্বাহী ও আইনসভার ক্ষমতার উপর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চেক। এটি নিশ্চিত করে যে কোনো আইন বা নির্বাহী পদক্ষেপ সংবিধান লঙ্ঘন না করে। বিচারকরা সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হন (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজীবন), যা তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে। বিচার বিভাগ নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ চেক হিসেবে কাজ করে, বিশেষ করে যখন নির্বাহী আদেশ বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ সংবিধান বা আইনের পরিপন্থী হয়।

ক্ষমতার ভারসাম্য ও চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স

ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি শাখার হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধ করা । প্রতিটি শাখা অন্য শাখার ক্ষমতাকে সীমিত করতে পারে, যার ফলে একটি গতিশীল ভারসাম্য বজায় থাকে। রাষ্ট্রপতি আইনসভা দ্বারা পাসকৃত আইনে ভেটো দিতে পারেন, যা আইন প্রণয়নে নির্বাহীর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। এটি আইনসভাকে এমন আইন প্রণয়ন থেকে বিরত রাখে যা নির্বাহীর কাছে অগ্রহণযোগ্য। আইনসভা রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের (যেমন বিচারক, মন্ত্রিসভার সদস্য) অনুমোদন করে এবং রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণ করতে পারে। এটি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ চেক, যা তাকে স্বেচ্ছাচারী হওয়া থেকে বিরত রাখে। বিচার বিভাগ আইনসভা দ্বারা প্রণীত আইন এবং নির্বাহী আদেশ উভয়কেই সাংবিধানিকতার ভিত্তিতে পর্যালোচনা করতে পারে এবং প্রয়োজনে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে। এটি নিশ্চিত করে যে কোনো আইন বা নির্বাহী পদক্ষেপ সংবিধান লঙ্ঘন না করে এবং ফ্যাসিবাদী আইন বা নীতির বাস্তবায়নকে বাধা দেয়। কিছু রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় ফেডারেলিজম ক্ষমতাকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে বিভক্ত করে, যা ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধ করে।

ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা

ক্ষমতার সুস্পষ্ট পৃথকীকরণ এবং কার্যকর চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা একনায়কতান্ত্রিক বা ফ্যাসিবাদী প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারে। প্রতিটি শাখা স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং একে অপরের উপর নজর রাখে, যা কোনো একটি শাখার ক্ষমতাকে অত্যধিক বাড়তে দেয় না। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ডিল যুগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির সময়ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের একটি মূল উপাদান ছিল। এটি দেখায় যে, একটি শক্তিশালী নির্বাহী থাকা সত্ত্বেও, সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ফ্যাসিবাদী শাসনকে প্রতিহত করতে পারে। বিচার বিভাগের সাংবিধানিক পর্যালোচনা ক্ষমতা নির্বাহী বা আইনসভার যেকোনো অসাংবিধানিক পদক্ষেপকে বাতিল করতে পারে, যা স্বৈরাচারী আইন বা নীতির বাস্তবায়নকে বাধা দেয়।

চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স তত্ত্বগতভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধ করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধ করে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উদাহরণে দেখা যায়, তীব্র রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং দলীয় আনুগত্য কখনও কখনও এই চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সকে দুর্বল করে দিতে পারে, বিশেষ করে যখন একটি দল নির্বাহী ও আইনসভা উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক নিয়মকানুন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রাষ্ট্রপতির দল হয়, তবে তারা রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপের উপর কার্যকর তদারকি করতে অনিচ্ছুক হতে পারে, যা চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, কেবল কাঠামোগত নকশা যথেষ্ট নয়; একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আনুগত্য এবং দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার সদিচ্ছা চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সকে কার্যকর রাখতে অপরিহার্য। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক নিয়মকানুনকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে, তবে কাঠামো যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র অবিশ্বাস ও সংঘাত বিদ্যমান , সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা সফল করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে সাংবিধানিক নিয়মকানুন মেনে চলতে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতাকে সম্মান করতে উৎসাহিত করার জন্য গভীর সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। এটি নিশ্চিত করবে যে, চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স কেবল কাগজে-কলমেই নয়, বাস্তবেও কার্যকর থাকে।

বিশ্বের উদাহরণ: রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা যেখানে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে সফল হয়েছে

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা তার কাঠামোগত নকশার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে এমন বেশ কিছু উদাহরণ বিশ্বে বিদ্যমান। এই উদাহরণগুলো দেখায় যে, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের নীতি কীভাবে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার একটি প্রধান এবং ঐতিহাসিক উদাহরণ। এর সংবিধান তিনটি স্বাধীন শাখার মধ্যে ক্ষমতা পৃথকীকরণ এবং চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের একটি জটিল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ব্যবস্থা ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে নিউ ডিল যুগে (১৯৩০-এর দশক), যখন ইউরোপে ফ্যাসিবাদী শাসন বাড়ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ ছিল, তখন ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং নির্বাহী বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল। সংবিধানের স্থপতিরা একটি শক্তিশালী নির্বাহী চেয়েছিলেন যা কার্যকর হতে পারে, কিন্তু একই সাথে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে পর্যাপ্ত চেকও চেয়েছিলেন। আদালতগুলো নির্বাহী আদেশের বৈধতা পর্যালোচনা করে এবং অসাংবিধানিক পদক্ষেপ বাতিল করে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি নিশ্চিত করে যে, রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা সংবিধানের আওতার বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন না।

দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়া একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র। সাম্প্রতিক সময়ে, দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, যা গণতান্ত্রিক স্থিতিস্থাপকতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট যখন সামরিক আইন ঘোষণা করে আইনপ্রণেতাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তখন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা দ্রুত একত্রিত হয়ে সেনাদের বাধা দেয় এবং আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টে প্রবেশ করে রাষ্ট্রপতির অসাংবিধানিক আদেশ ১৯০-০ ভোটে বাতিল করে দেন। এটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, সক্রিয় নাগরিক সমাজ এবং ক্রস-পার্টি সহযোগিতার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি দেখায় যে, যখন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাংবিধানিক ভূমিকা পালন করে এবং জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, তখন রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থাও কর্তৃত্ববাদ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।

গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার কাঠামোগত চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স (যেমন ভেটো, অভিশংসন, জুডিশিয়াল রিভিউ) কর্তৃত্ববাদ প্রতিরোধে সহায়ক। তবে, দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দেখায় যে, কেবল কাঠামোগত সুরক্ষা যথেষ্ট নয়; সক্রিয় নাগরিক সমাজ এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধও ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপকে ব্যর্থ করতে পারে। এই দ্বিমাত্রিকতা নির্দেশ করে যে, একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য কেবল সাংবিধানিক নকশা নয়, বরং জনগণের সচেতনতা, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা বজায় রাখার সদিচ্ছা এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধের ক্ষমতাও অপরিহার্য। কাঠামোগত চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করে, কিন্তু এর কার্যকারিতা নির্ভর করে রাজনৈতিক অভিনেতা এবং সমাজের উপর। যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সাংবিধানিক সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করে, তখন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃঢ়তা সেই প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে পারে। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ হলো, রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও, এর সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কেবল কাঠামোগত পরিবর্তনই যথেষ্ট হবে না, বরং একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাও অপরিহার্য, যেখানে জনগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং যেকোনো স্বৈরাচারী প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে প্রস্তুত। এটি একটি সামগ্রিক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যেখানে সাংবিধানিক নকশা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে।

অন্যান্য প্রাসঙ্গিক উদাহরণ

চিলি, যদিও একসময় পিনোচেটের সামরিক স্বৈরাচারের অধীনে ছিল, তবে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় ক্ষমতা পৃথকীকরণের ধারণাটি পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে। এটি দেখায় যে, এমনকি স্বৈরাচারী শাসনের পরেও, ক্ষমতার পৃথকীকরণ একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি হতে পারে। কলম্বিয়া, দশকের পর দশক ধরে সহিংস সংঘাতের পর, একটি ভঙ্গুর কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক পুনর্নবীকরণের দিকে অগ্রসর হয়েছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন এবং জন আস্থা পুনরুদ্ধারে আলোচনা, পুনর্মিলন এবং কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে। যদিও সরাসরি ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ বলা কঠিন, তবে এটি কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি উদাহরণ, যেখানে ক্ষমতা বন্টন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তর একটি অসাধারণ উদাহরণ, যেখানে একটি গভীরভাবে মেরুকৃত জাতি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক সংস্কার গ্রহণ করেছে এবং জাতীয় পুনর্মিলন প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করেছে । যদিও এটি সরাসরি রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার অধীনে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের উদাহরণ নয়, তবে এটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে, যা যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য।

বাংলাদেশে সংসদীয় ব্যবস্থার সমস্যা ও দুর্বলতা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সংসদীয় ব্যবস্থার অধীনে বেশ কিছু গভীর এবং পুনরাবৃত্তিমূলক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যা দেশটির গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বারবার ব্যাহত করেছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বারবার সরকার পরিবর্তন ও সামরিক শাসন

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে: বহুদলীয় সংসদীয় ব্যবস্থা (১৯৭১-৭৪), একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা (১৯৭৫), এবং বহুদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা (১৯৭৮-৮২; ১৯৮৬-১৯৯০)। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় আট বছর দেশ একাধিক বার সামরিক শাসনের অধীনে ছিল । এই সামরিক শাসনগুলো প্রায়শই পূর্ববর্তী বেসামরিক সরকারের অস্থিতিশীলতা বা কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছিল। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও, এরপর থেকে নির্বাচিত দশটি সংসদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। এটি সংসদীয় ব্যবস্থার অধীনে সরকারের অস্থিতিশীলতার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।

শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে (১৯৭২-১৯৭৫) সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত (বাকশাল) ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়, যা সংবিধান সংশোধন করে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে কর্তৃত্ববাদের দিকে ধাবিত হয়েছিল। জিয়াউর রহমান (১৯৭৫-১৯৮১) এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (১৯৮২-১৯৯০) এর সামরিক শাসনামলেও রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল, যা কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা প্রদর্শন করে, যেমন সামরিক ক্যু দমন, গোপন বিচার এবং রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতা বৈধকরণের চেষ্টা।

কার্যকর বিরোধী দলের অভাব

বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় কার্যকর বিরোধী দলের অভাব একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। ২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সংসদে কোনো কার্যকর বিরোধী দল ছিল না, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিরোধী দলের ভূমিকা সীমিত ছিল এবং তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছিল। কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি সরকারের স্বেচ্ছাচারিতাকে উৎসাহিত করে এবং জবাবদিহিতা দুর্বল করে। টিআইবি’র পার্লামেন্ট ওয়াচ রিপোর্টে দেখা গেছে, ১০ম সংসদে বিরোধী দলের দ্বৈত ভূমিকা (সরকার ও বিরোধী দলে একই সাথে থাকা) তাদের কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ করেছে।

ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ ও স্বৈরাচারী প্রবণতা

১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও, এটি কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা থেকে মুক্তি পায়নি। শেখ হাসিনার শাসনামলে (২০০৯-২০২৪) রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (২০১৮) ভিন্নমত দমনে ব্যবহৃত হয়েছে, যা নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করেছে। বিচার বিভাগ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নির্বাহীর নিয়ন্ত্রণে আনার অভিযোগ রয়েছে। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এবং বিরোধী দলের দুর্বলতা ‘ট্রেজারি বেঞ্চের’ নিরঙ্কুশ আধিপত্যের দিকে নিয়ে গেছে, যেখানে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল।

নির্বাচনী কারচুপি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা

কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর (২০১১), ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যেমন ভোট জালিয়াতি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং বিরোধী দলের দমন। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস করেছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অবিশ্বাস রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিবাদ, সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক করে তুলেছে।

পরিবারতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র এবং বংশীয় রাজনীতির প্রভাব প্রবল, যা নেতৃত্ব এবং সাফল্যের সাথে পারিবারিক নামকে সমার্থক করে তোলে। শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার মতো “ব্যাটলিং বেগমস” এর নেতৃত্ব এর উদাহরণ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র অবিশ্বাস, পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সহিংস কৌশল ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। এটি একটি ‘শাস্তির সংস্কৃতি’ তৈরি করেছে যেখানে বিরোধী দলকে দমন করা হয় । রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ‘পেশী শক্তি’ এবং অর্থ-নির্ভর রাজনীতির প্রভাব বেড়েছে, যেখানে নতুন রাজনীতিবিদরা প্রায়শই অর্থ ও সশস্ত্র সমর্থনের মাধ্যমে পুরনোদের প্রতিস্থাপন করছেন, যা রাজনীতিকে অরাজনৈতিক, অর্থ-চালিত এবং সহিংস করে তুলেছে।

সংসদীয় ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো কেবল কাঠামোগত নয়, বরং দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি (যেমন তীব্র দলীয় মেরুকরণ, পরিবারতন্ত্র, অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সহিংসতা) দ্বারাও প্রভাবিত। সংসদীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার ফিউশন এই সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করে, কারণ ক্ষমতাসীন দল আইনসভা ও নির্বাহী উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে। এটি বিরোধী দলকে কার্যকরভাবে কাজ করতে বাধা দেয় এবং তাদের রাজনৈতিক স্থান সংকুচিত করে । দলীয় আনুগত্য এবং ‘উইনার-টেক-অল’ মানসিকতা আইনসভাকে সরকারের কার্যকর তদারকিতে ব্যর্থ করে তোলে। এটি একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে: সংসদীয় ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে উৎসাহিত করে, যা ঘুরেফিরে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে এবং ফ্যাসিবাদী প্রবণতার জন্ম দেয়। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি এই চক্রকে আরও ত্বরান্বিত করেছে, কারণ এটি নির্বাচনকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করেছে। এই মিথস্ক্রিয়া ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশের জন্য একটি কার্যকর সরকার ব্যবস্থা কেবল কাঠামোগত পরিবর্তনের উপর নির্ভর করবে না, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের সংস্কৃতি গড়ে তোলার উপরও নির্ভর করবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল প্রক্রিয়া।

কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ও তার প্রভাব

১৯৯৬ সালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যা নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। ২০১১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই ব্যবস্থা বাতিল করে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতার জন্ম দেয়। এই বিলুপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ সরিয়ে দিয়েছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নির্বাহীর একতরফা ক্ষমতার ঝুঁকি বাড়িয়েছে এবং নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার পক্ষে জোরালো যুক্তি

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং সংসদীয় ব্যবস্থার অধীনে বারবার উদ্ভূত সমস্যাগুলো বিবেচনা করে, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ এবং একটি স্থিতিশীল, জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা অধিকতর উপযুক্ত বলে দৃঢ়ভাবে যুক্তি দেওয়া যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার পৃথকীকরণ ও চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাহী ও আইনসভার ক্ষমতার মিশ্রণ (fusion of powers) প্রায়শই ক্ষমতাসীন দলকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করেছে, যার ফলে কার্যকর বিরোধী দলের অভাব এবং জবাবদিহিতার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ এবং স্বৈরাচারী প্রবণতার জন্ম দিয়েছে, যা ফ্যাসিবাদী শাসনের পথ প্রশস্ত করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় নির্বাহী, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের মধ্যে সুস্পষ্ট ক্ষমতা পৃথকীকরণ এই কেন্দ্রীভূতকরণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি শাখা স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং একে অপরের উপর চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রয়োগ করে, যা কোনো একটি শাখার ক্ষমতাকে অত্যধিক বাড়তে দেয় না। এটি নিশ্চিত করে যে, এমনকি যদি একজন রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা অপব্যবহারের চেষ্টা করেন, তবে আইনসভা (ভেটো বাতিল, অভিশংসন) এবং বিচার বিভাগ (জুডিশিয়াল রিভিউ) তাকে প্রতিরোধ করতে পারে।

স্থায়ী ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব নিশ্চিতকরণ

সংসদীয় ব্যবস্থায় অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে সরকারের ঘন ঘন পরিবর্তন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এটি দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা দেয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায়, রাষ্ট্রপতি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন এবং সহজে অপসারিত হতে পারেন না। এই স্থিতিশীলতা দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়ক। উপরন্তু, রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ায় , তিনি আইনসভার প্রতি নয়, বরং সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি করেন। এটি তাকে একটি শক্তিশালী জনপ্রিয় ম্যান্ডেট দেয় এবং দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে।

রাজনৈতিক মেরুকরণ ও সংঘাত হ্রাস

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুটি দলের মধ্যে তীব্র অবিশ্বাস এবং সংঘাত একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা প্রায়শই রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে। সংসদীয় ব্যবস্থায়, ‘উইনার-টেক-অল’ মানসিকতা এবং ক্ষমতার ফিউশন এই মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তোলে, কারণ বিজয়ী দল প্রায়শই বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে প্রান্তিক করার চেষ্টা করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায়, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের কারণে, সরকার গঠনের জন্য আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও, রাষ্ট্রপতিকে আইন প্রণয়ন ও নীতি বাস্তবায়নের জন্য আইনসভার সমর্থন পেতে হয়। এটি সমঝোতা এবং সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে, যা রাজনৈতিক মেরুকরণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় নীতি বাস্তবায়নের সুবিধা

সংসদীয় ব্যবস্থার অনিশ্চিত মেয়াদ এবং ঘন ঘন নির্বাচন বা জোট পরিবর্তনের সম্ভাবনা দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাধা দেয় । রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সামাজিক নীতিগুলোর ধারাবাহিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারে। এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জনগণের সরাসরি জবাবদিহিতা

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি তাদের সরকারপ্রধানকে নির্বাচিত করে। এটি জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি অধিকতর মালিকানা এবং অংশগ্রহণের অনুভূতি তৈরি করতে পারে। একজন সরাসরি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জনগণের কাছে তার কর্মের জন্য সরাসরি দায়বদ্ধ থাকেন, যা সংসদীয় ব্যবস্থার পরোক্ষ নির্বাচনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বৈধতা প্রদান করে।

উপসংহার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে, সংসদীয় ব্যবস্থা দেশটির জন্য স্থিতিশীলতা এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ, কার্যকর বিরোধী দলের অভাব, নির্বাচনী কারচুপি এবং রাজনৈতিক সহিংসতা সংসদীয় ব্যবস্থার অধীনে ফ্যাসিবাদী প্রবণতার জন্ম দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার ক্ষমতার সুস্পষ্ট পৃথকীকরণ, কার্যকর চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং রাষ্ট্রপতির নির্দিষ্ট মেয়াদ ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি নির্বাহীর স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করে, আইনসভাকে তার তদারকি ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর উদাহরণ দেখায় যে, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং সক্রিয় নাগরিক সমাজের সাথে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা কীভাবে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে সফলভাবে প্রতিহত করতে পারে।

তবে, কেবল সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা সফল করতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ও সমঝোতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে সম্মান করা অপরিহার্য। একটি শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যাতে চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স কেবল কাগজে-কলমেই নয়, বাস্তবেও কার্যকর থাকে।

ফ্যাসিবাদমুক্ত, স্থিতিশীল এবং জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, একটি সুচিন্তিত রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা একটি সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

Works cited

1. A guide to the Parliament of Bangladesh (the Jatiya Sangsad, or House of the Nation), by Nizam Ahmed – Hansard Society, https://www.hansardsociety.org.uk/blog/a-guide-to-the-jatiya-sangsad-the-parliament-of-bangladesh-prof-nizam 

2. President of Bangladesh – Wikipedia, https://en.wikipedia.org/wiki/President_of_Bangladesh 

3. Democracy and Authoritarianism: Understanding Three Decades of Bangladesh Politics – CORE, https://core.ac.uk/download/pdf/234675532.pdf 

4. Bangladesh’s Constitutional Crossroads: Reforms, Exclusion, and the Quest for Democratic Legitimacy — IACL-IADC Blog, https://blog-iacl-aidc.org/2025-posts/2025/3/27/bangladeshs-constitutional-crossroads-reforms-exclusion-and-the-quest-for-democratic-legitimacy 

5. A Damaged Democracy: Sheikh Hasina’s Authoritarian Rule in Bangladesh, https://www.humanrightsresearch.org/post/a-damaged-democracy-sheikh-hasina-s-authoritarian-rule-in-bangladesh 

6. Bangladesh: A Fragile Opening After a Successful Popular Uprising, https://europeandemocracyhub.epd.eu/bangladesh-a-fragile-opening-after-a-successful-popular-uprising/ 

7. A Perilous Moment for Bangladesh’s Democracy | United States Institute of Peace, https://www.usip.org/publications/2024/03/perilous-moment-bangladeshs-democracy 

8. Bangladesh’s Reform Dilemma: Insights from its Ongoing Political Transition, https://toda.org/global-outlook/2024/bangladeshs-reform-dilemma-insights-from-its-ongoing-political-transition.html 

9. Bangladesh: Turmoil and Transition in a Fragile Democracy – South Asia@LSE, https://blogs.lse.ac.uk/southasia/2024/02/26/bangladesh-turmoil-and-transition-in-a-fragile-democracy/ 

10. Shaping a Political System (Chapter 20) – A History of Bangladesh, https://www.cambridge.org/core/books/history-of-bangladesh/shaping-a-political-system/99D89617A68C755C2817A4F73603F088 

11. An Analysis of The Advantages and Disadvantages of Parliamentary and Presidential Forms of Government, https://www.iilsindia.com/blogs/an-analysis-of-the-advantages-and-disadvantages-of-parliamentary-and-presidential-forms-of-government/ 

12. Advantages, Disadvantages, and Challenges of Presidential and …, https://library.fiveable.me/intro-to-poli-sci/unit-10/4-advantages-disadvantages-challenges-presidential-parliamentary-regimes/study-guide/KfWr1Pwtcb5dStAy 

13. Shifting Tides in South Asia: Bangladesh’s Failed Election | Journal …, https://www.journalofdemocracy.org/articles/shifting-tides-in-south-asia-bangladeshs-failed-election/ 

14. Absence of Opposition, Less Attention in Legislation Impede …, https://ti-bangladesh.org/articles/story/5882 

15. Democratic structures under strain | BMZ, https://www.bmz.de/en/countries/bangladesh/political-situation-48720 

16. Politics of Bangladesh – Wikipedia, https://en.wikipedia.org/wiki/Politics_of_Bangladesh 

17. What Is the Difference between Parliamentary and Presidential Systems? | Intro to Political Science Class Notes | Fiveable, https://library.fiveable.me/intro-to-poli-sci/unit-9/2-difference-parliamentary-presidential-systems/study-guide/lD7DiFTccAvxsYSq 

18. Benefits and Disbenefits of Adopting a Presidential or a Parliamentary Executive System, https://diplomatmagazine.eu/2024/07/29/benefits-and-disbenefits-of-adopting-a-presidential-or-a-parliamentary-executive-system/ 

19. 4.3: Systems of Democracy – Social Sci LibreTexts, https://socialsci.libretexts.org/Bookshelves/Political_Science_and_Civics/Introduction_to_Comparative_Government_and_Politics_(Bozonelos_et_al.)/04%3A_Democracies_and_Democratization/4.03%3A_Systems_of_Democracy 

20. Presidential system – Wikipedia, https://en.wikipedia.org/wiki/Presidential_system 

21. en.wikipedia.org, https://en.wikipedia.org/wiki/Presidential_system#:~:text=Separation%20of%20powers,-Main%20article%3A%20Separation&text=The%20presidential%20system%20is%20defined,traditionally%20delegated%20to%20the%20president. 

22. Separation of Powers: An Overview, https://www.ncsl.org/about-state-legislatures/separation-of-powers-an-overview 

23. Checks and Balances – Ben’s Guide, https://bensguide.gpo.gov/j-check-balance 

24. http://www.usa.gov, https://www.usa.gov/branches-of-government#:~:text=The%20ability%20of%20each%20branch,agencies%20and%20high%20court%20appointees. 

25. Presidential System – Annenberg Classroom, https://www.annenbergclassroom.org/glossary_term/presidential-system/ 

26. Balance of Power: Congress and the Presidency – Karsh Institute of Democracy, https://karshinstitute.virginia.edu/news/balance-power-congress-and-presidency 

27. Balance Of Power – (AP US Government) – Vocab, Definition, Explanations | Fiveable, https://library.fiveable.me/key-terms/ap-gov/balance-of-power 

28. What Are Executive Orders and How Do They Work? – Campaign Legal Center, https://campaignlegal.org/update/what-are-executive-orders-and-how-do-they-work 

29. Is it the courts’ job to check executive overreach? – Brookings Institution, https://www.brookings.edu/articles/is-it-the-courts-job-to-check-executive-overreach/

30. Case Studies: Checks and Balances | Bill of Rights Institute, https://billofrightsinstitute.org/activities/case-studies-checks-and-balances 

31. THE ANTIFASCIST ROOTS OF PRESIDENTIAL ADMINISTRATION – Columbia Law Review, https://www.columbialawreview.org/content/the-antifascist-roots-of-presidential-administration/ 

32. Rosenblum-The_Antifascist_Roots_Of_Presidential_Administration.pdf – Columbia Law Review -, https://columbialawreview.org/wp-content/uploads/2022/01/Rosenblum-The_Antifascist_Roots_Of_Presidential_Administration.pdf 

33. Avoiding Authoritarianism in the Administrative Procedure Act – The George Mason Law Review, https://lawreview.gmu.edu/print__issues/3962-2/

34. Confronting Authoritarianism and Organizing Resistance: Case Studies and Lessons Learned – The Commons Social Change Library, https://commonslibrary.org/confronting-authoritarianism-and-organizing-resistance-case-studies-and-lessons-learned/

35. How Democracies Defend Themselves Against Authoritarianism, https://www.americanprogress.org/article/how-democracies-defend-themselves-against-authoritarianism/

36. (PDF) Rise of Competitive Authoritarianism in Bangladesh – ResearchGate, https://www.researchgate.net/publication/342888749_Rise_of_Competitive_Authoritarianism_in_Bangladesh 

37. Second Revolution (Bangladesh) – Wikipedia, https://en.wikipedia.org/wiki/Second_Revolution_(Bangladesh) 

38. BAKSAL | Bangladesh Genocide Archive, https://www.genocidebangladesh.org/tag/baksal/ 

39. Presidency of Ziaur Rahman – Wikipedia, https://en.wikipedia.org/wiki/Presidency_of_Ziaur_Rahman 

40. Democratization of Bangladesh politics and the role of Zia: A political analysis – International Society for Development and Sustainability, https://isdsnet.com/ijds-v4n3-4.pdf 

41. MILITARY TAKE OVER BY GENERAL ERSHAD AND CONSTITUTIONAL AMENDMENT IN BANGLADESH: A MODEST POLITICO-LEGAL STUDY Dr. Md. Morshedul – EA Journals, http://www.eajournals.org/wp-content/uploads/Military-Take-Over-By-General-Ershad-and-Constitutional-Amendment-in-Bangladesh-A-Modest-Politico-Legal-Study.pdf 

42. The development of the internal political situation in the government of Bangladeshi President Hussein Muhammad Ershad 1983 -1990 | Mustansiriyah Journal of Humanities, https://mjh.uomustansiriyah.edu.iq/index.php/mjh/article/view/602 

43. The Culture of Political Violence and Punishment in Bangladesh: The Role of Political Parties and Civil Society | Economic and Political Weekly, https://www.epw.in/engage/article/culture-political-violence-and-punishment 

44. Bangladesh’s Constitutional Reforms: Caught Between Democratic Hopes and Authoritarian Resilience | ConstitutionNet, https://constitutionnet.org/news/voices/bangladeshs-constitutional-reforms-caught-between-democratic-hopes-and-authoritarian


Discover more from LK INNOVATE

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a comment

Trending

Discover more from LK INNOVATE

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading