ড. লোকমান খান, বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ

প্রতিদিন আমরা অনেক কাজ এবং দায়িত্ব সামলে চলি। পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যক্তিগত প্রকল্প – সবকিছুতেই উৎপাদনশীলতা (Productivity) বাড়ানো খুব জরুরি। উৎপাদনশীলতা বাড়লে একই সময়ে বেশি কাজ সম্পন্ন করা যায় এবং লক্ষ্য পূরণ সহজ হয়। কেন কিছু মানুষ সময়কে দক্ষভাবে কাজে লাগাতে পারে আর কিছু পারে না, তার পেছনে বড় কারণ হলো মস্তিষ্কের কার্যপ্রক্রিয়া। সাম্প্রতিক নিউরোসায়েন্স বা মস্তিষ্কবিজ্ঞানের গবেষণা আমাদেরকে জানাচ্ছে যে নিজের মস্তিষ্ককে বোঝা এবং যত্ন নেওয়া এর মাধ্যমেই আমরা দৈনন্দিন জীবনে আরও ফলপ্রসূ হতে পারি। নিচে সহজ ভাষায় এবং বাস্তব উদাহরণসহ এমন কিছু বৈজ্ঞানিক কৌশল আলোচনা করা হলো, যা মেনে চললে আপনার মানসিক স্বচ্ছতা, মনোযোগ এবং সাফল্য বাড়তে পারে।

  1. ১. মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ছন্দ
  2. ২. গভীর মনোযোগের শক্তি
  3. ৩. সকালের ব্যায়াম ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা
  4. ৪. পুষ্টি এবং মস্তিষ্কের দক্ষতা
  5. ৫. মাইন্ডফুলনেস ও চাপ নিয়ন্ত্রণ
  6. ৬. উৎপাদনশীলতায় ঘুমের ভূমিকা
  7. ৭. মনোযোগ বজায় রাখতে সঙ্গীতের ব্যবহার
  8. ৮. বিরতি এবং মস্তিষ্কের রিসেট
  9. ৯. উৎপাদনশীলতায় পরিবেশের প্রভাব
  10. উপসংহার

১. মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ছন্দ

আমাদের মস্তিষ্কের একটি জৈবিক ঘড়ি আছে – যাকে সার্কাডিয়ান রিদম বলা হয় – যা দিনে কখন আমরা জাগ্রত ও সতর্ক থাকব এবং কখন ক্লান্ত অনুভব করব তা নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা ও মনোযোগ শক্তিশালী হয় আবার কিছু সময়ে হ্রাস পায়। অনেকের ক্ষেত্রেই সকাল বেলার দিকে মস্তিষ্ক সবচেয়ে সজাগ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যুক্তিযুক্ত চিন্তাশক্তি ও স্বল্প-মেয়াদি স্মৃতির কাজে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে মানুষ দ্রুত ও সঠিকভাবে কাজ করতে পেরেছে, এরপর পারফরম্যান্স দ্রুত নিচের দিকে নেমে গেছে। আবার বয়সভেদেও পার্থক্য থাকে – তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের মস্তিষ্ক সকালে বেশি কর্মক্ষম, আর তরুণরা অনেকসময় বিকেলে ভাল কাজ করে।

আপনার কাজ: নিজের দৈনন্দিন ছন্দ পর্যবেক্ষণ করুন। দেখুন আপনি সকাল, দুপুর নাকি রাতে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করতে পারেন। যে সময়টাতে আপনার মস্তিষ্কের ব্যাটারি বেশি চার্জ থাকে, সেই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনা, লেখালেখি বা সৃজনশীল কাজের জন্য রাখুন। উদাহরণ হিসাবে, কেউ সকাল ৭টার দিকে উঠে দেখলেন মাথা ফ্রেশ অনুভূত হচ্ছে – তিনি তখনই কঠিন কাজগুলো সেরে ফেলতে পারেন। অপরদিকে, কেউ রাত ১০টার পর সবচেয়ে মনোযোগী – তাহলে তখন পড়তে পারেন। সারাদিনের ভেতর মস্তিষ্কের শক্তি-স্তর (mental energy) ওঠানামা করে, তাই প্রাকৃতিক ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে চললে আপনি কম পরিশ্রমেই বেশি ফল পাবেন।

২. গভীর মনোযোগের শক্তি

আমরা যখন কোনো কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করি এবং বাহ্যিক বিঘ্ন (মোবাইল নোটিফিকেশন, সামাজিক মাধ্যম ইত্যাদি) দূর রাখি, তখন তাকে বলে ডিপ ওয়ার্ক বা গভীর মনোযোগের কাজ। এই ধরনের গভীর মনোযোগে কাজ করার অভ্যাস আপনার মস্তিষ্ককে তার সর্বোচ্চ ক্ষমতায় কাজে লাগাতে দেয়। লেখক ক্যাল নিউপোর্টের ভাষায়, ডিপ ওয়ার্ক হল “দীর্ঘ সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ দিয়ে কঠিন কাজ করা, যা নতুন মান তৈরি করে ও দক্ষতা উন্নত করে”। নিউরোসায়েন্স অনুযায়ী, এমন মনোযোগের সময়ে আমাদের মস্তিষ্কে অ্যাসিটাইলকোলিন, ডোপামিন ও নরএপিনেফ্রিনের মতো কয়েকটি neuromodulator রাসায়নিক একসাথে কাজ করে যা মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে। সহজভাবে বললে, গভীর মনোযোগ আমাদের মস্তিষ্কের জন্য এক ধরনের ব্যায়াম, যা মনোযোগের পেশীকে শক্তিশালী করে।

একটা বাস্তব উদাহরণ ভাবুন: আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন উপন্যাস পড়তে শুরু করলে কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়, চারপাশের কথা ভুলে যান। অথবা কোনো প্রজেক্টে ডুবে গেলে সময় কোথা দিয়ে পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারেননি। এই অবস্থায় মস্তিষ্ক ফ্লো নামে একটি অবস্থায় থাকে যেখানে কাজটা কঠিন হলেও আনন্দ দেয়। এই অভিজ্ঞতাটি দেখায় যে গভীর মনোযোগে আপনি কম সময়ে বেশি শিখতে বা তৈরি করতে পারেন।

আপনার কাজ: প্রতিদিন কিছু নির্দিষ্ট সময় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করার অভ্যাস করুন। ফোনকে সাইলেন্ট মোডে রেখে বা আলাদা রুমে রেখে দিন, ব্রাউজারে বিভ্রান্তিকর ট্যাব বন্ধ করুন। শুরুতে হয়তো ৩০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন লাগতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। দেখবেন, নিয়মিত এমন চর্চা করলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে প্রশিক্ষিত হয়ে যাবে এবং বিঘ্ন ছাড়াই গভীর কাজের সময়ে উদ্যমী থাকবে। এটি আপনাকে দ্রুত শিখতে ও কাজ শেষ করতে সহায়তা করবে, যা অবশ্যই উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

৩. সকালের ব্যায়াম ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা

সকালে কিছুটা দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়াম মস্তিষ্ককে দিনের জন্য প্রস্তুত করে। শারীরিক ব্যায়াম শুধু আমাদের দেহের জন্যই নয়, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও অসাধারণ উপকারী। গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করেন তাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি ও চিন্তার কেন্দ্রগুলো আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। সকালে হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়ামের মতো অ্যাক্টিভিটি মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং ব্রেইনে এমন কিছু রাসায়নিক নিঃসৃত হয় যা আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা ও মনোযোগ উন্নত করে। শুধু তাই নয়, সকালে করা ৩০ মিনিটের শারীরিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব সারা দিন ধরে থাকতে পারে এবং এমনকি পরের দিনও মস্তিষ্ককে একটু বেশি কর্মক্ষম রাখতে পারে।

কেন ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য ভালো তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে। ধরুন পরীক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের আগে আপনি একটু সকাল বেলা হাঁটলেন কিংবা হালকা জগিং করলেন। এতে আপনার হৃদস্পন্দন বাড়বে, রক্ত চলাচল ত্বরান্বিত হবে, ফলে মস্তিষ্কে বেশি অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছাবে। অনেকটা যেন ঘুম থেকে জেগে শরীরে এক মগ কফির মতো চাঙা ভাব আসে। ব্যায়ামের ফলে বের হওয়া এনডোরফিন নামের “ফিল গুড” হরমোনও মানসিক চাপ কমায়, মেজাজ ভালো করে – যা পরে পড়াশোনা বা কাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আপনার কাজ: খুব ভারী অনুশীলন নাও করতে পারেন, কিন্তু প্রতিদিন সকালে ১৫-৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। সাইকেল চালানো, প্রাতঃকালের হালকা ব্যায়াম, এমনকি ঘরের কাজ (ঝাড়ু দেওয়া, গাছপালা তত্ত্বাবধান) – যেকোনো গতিশীল কাজেই উপকার পাবেন। সকালে এনার্জি খরচ করলে মস্তিষ্ক সারা দিনে আরো সচল থাকবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে।

৪. পুষ্টি এবং মস্তিষ্কের দক্ষতা

বৈচিত্র্যময় পুষ্টিকর খাবার আমাদের মস্তিষ্কের “জ্বালানি” সরবরাহ করে। একটা প্রচলিত কথা আছে – “আপনি যা খান, তাই-ই হবেন”। কথাটা আক্ষরিকভাবে না হলেও ইঙ্গিতটা একদম ঠিক – আমরা কী খাচ্ছি তার উপর আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা অনেকাংশে নির্ভর করে। মস্তিষ্ক ২৪ ঘণ্টা কাজ করে, এমনকি ঘুমের সময়ও থামে না, তাই এটি সারাক্ষণ জ্বালানী চায় । ভালো মানের পুষ্টিকর খাবার (যেমন শাকসবজি, ফল, বাদাম, পূর্ণ শস্য, মাছ ইত্যাদি) মস্তিষ্ককে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দিয়ে পুষ্ট রাখে, যা মস্তিষ্ককে ক্ষতিকারক অক্সিডেটিভ চাপ থেকে রক্ষা করে । বিপরীতে যারা খুব বেশি প্রসেসড জাংক ফুড বা চিনিযুক্ত খাবার খান, তাদের মস্তিষ্ক সেই “নিন্মমানের জ্বালানি” পেয়ে কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে – স্মৃতি ও মনোযোগে ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং মেজাজও খারাপ হতে থাকে ।

আমাদের খাওয়া খাবারগুলিকে যদি গাড়ির জ্বালানির সাথে তুলনা করি, তবে পুষ্টিকর খাবার হল প্রিমিয়াম পেট্রোল আর ফাস্টফুড হলো সস্তা পেট্রোলের মতো। প্রিমিয়াম জ্বালানি গাড়ির মাইলেজ ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়; ঠিক তেমনি সুষম আহার আপনার মস্তিষ্ককে দীর্ঘসময় সতেজ রাখে। অপরদিকে একবারে খুব বেশি ভাজাপোড়া বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে প্রথমে কিছুক্ষণ শক্তি পাওয়া গেলেও দ্রুতই শক্তি পড়ে যায়, যেমন বেশি তেলে রান্না খেলে দুপুরের পর ঘুম ঘুম লাগা শুরু হয়। অনেকেই দুপুরে ভারী ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে “বিকেলের ঝিমুনি” অনুভব করেন  – এর কারণ হলো এই খাবার দ্রুত গ্লুকোজ দেয়, তারপর রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ায় মাথা ঝিমাতে থাকে। আবার পর্যাপ্ত পানি না পান করলেও কিন্তু সমস্যা – সামান্য পানি শূন্যতা হলেও মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজ এবং মনোযোগে ঘাটতি হতে পারে। তাই খাবারের সাথে সাথে দিনে প্রচুর পানি পান করাও ভীষণ দরকারি।

আপনার কাজ: প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র্য আনুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে বেশি প্রাকৃতিক খাবার খান। সকালে একটি পুষ্টিকর নাশতা (যেমন ডিম, বাদাম, ফল সহ খাবার) খান যাতে মস্তিষ্ক সকালের জ্বালানি পায়। দুপুরে অতিরিক্ত ভারী বা তেল-চর্বি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন যাতে খাওয়ার পর তন্দ্রা না আসে। একবারে অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার চেয়ে অল্প অল্প করে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেতে পারেন – এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকবে এবং মস্তিষ্ক স্থায়ী জ্বালানি পাবে। মনে রাখবেন, সঠিক পুষ্টি মস্তিষ্কের জন্য প্রিমিয়াম ফুয়েল; এটি আপনার মনোযোগ, স্মৃতি ও মেজাজ তিনটাই উন্নত করবে, ফলে কাজের ফলাফলও উন্নত হবে।

৫. মাইন্ডফুলনেস ও চাপ নিয়ন্ত্রণ

নিয়মিত ধ্যান ও মনস্থির করার অনুশীলন মানসিক চাপ কমিয়ে মনোযোগ বাড়াতে পারে। আধুনিক জীবনে স্ট্রেস (চাপ) আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় শত্রুদের একটি। যখন আমরা ভীষণ চাপ বা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন বেশি ছাড়ে, যা দীর্ঘসময় উচ্চমাত্রায় থাকলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। এই চাপ কমানোর একটি উপায় হল মাইন্ডফুলনেস বা সচেতন উপস্থিতি অনুশীলন। মাইন্ডফুলনেস বলতে বোঝায় বর্তমান মুহূর্তে নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও আশপাশের ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ রাখা – অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তায় না ভেবে “এখনে-এখন”-এ থাকা। সহজ ভাষায়, এটা এক ধরনের ধ্যান যেখানে আপনি গভীর শ্বাস নিয়ে নিজের মনে যা ঘটছে তা শান্তভাবে লক্ষ্য করেন।

বিজ্ঞান কী বলে? গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ৮ সপ্তাহ নিয়মিত সংক্ষিপ্ত সময়ের মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন চর্চার ফলে মানুষের মনোযোগ ক্ষমতা, স্মরণশক্তি, মন-মেজাজ ও আবেগের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উন্নত হয়েছে। ধ্যান করার সময়ে মস্তিষ্কের বিচরণশীল চিন্তাগুলো ধীরে ধীরে থেমে যায় এবং নির্দিষ্ট এক জায়গায় মন স্থির হয়। ফলে আমাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (মস্তিষ্কের যে অংশ ফোকাস ও সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত) আরও সক্রিয় হয় এবং অ্যামিগডালা (যা আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করে) শান্ত হয়। একটা পরিচিত উদাহরণ হলো: পরীক্ষা বা উপস্থাপনার আগে ভীষণ নার্ভাস লাগলে কয়েক মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া। দেখা যায় এতে আমাদের হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে আসে, উদ্বেগ কমে এবং মাথা পরিষ্কার মনে হয় – আসলে এটাই মাইন্ডফুলনেসের প্রাথমিক চর্চা। ধীরে ধীরে ধ্যানের অভ্যাস করলে মস্তিষ্ক কর্টেক্সকে ভালোভাবে সামলাতে শেখে এবং দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ বিচ্যুতি কম হয়।

আপনার কাজ: প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ মিনিট মাইন্ডফুলনেস বা ধ্যানের জন্য আলাদা করুন। খুব সহজভাবে শুরু করতে পারেন – শান্ত কোনো জায়গায় সোজা হয়ে বসলেন, চোখ বন্ধ করলেন এবং নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোনিবেশ করলেন। মাঝে মাঝে মন অন্য চিন্তায় চলে যেতে পারে, সেটা স্বাভাবিক; তখন আবার শ্বাসের দিকে মন ফেরান। এছাড়াও প্রার্থনা, যোগব্যায়াম, এমনকি প্রতিদিন কৃতজ্ঞতার তালিকা লেখা – এসবও মাইন্ডফুলনেসেরই অংশ, যা মনকে “বর্তমান” মুহূর্তে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই অভ্যাস করলে দেখবেন চাপের মুহূর্তেও আপনি আগের চেয়ে অনেক শান্ত থাকতে পারছেন এবং কাজের সময়েও মন বিঘ্নিত হচ্ছে কম। মানসিক শান্তি ও একাগ্রতা – উভয়ই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির চাবিকাঠি।

৬. উৎপাদনশীলতায় ঘুমের ভূমিকা

উপযুক্ত পরিমাণ ঘুম হচ্ছে মস্তিষ্কের জন্য যাদুর মতো কাজ করা একটি ওষুধ। সারাদিনের শেখা তথ্য, অভিজ্ঞতা আর স্মৃতি – এগুলো ঠিকমতো ধরে রাখতে হলে রাতে গভীর ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ও গভীর নিদ্রা আমাদের মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায়; পাশাপাশি স্মৃতি সংরক্ষণ, সমস্যা সমাধান, সৃজনশীল চিন্তা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতাও উন্নত করে। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে রিচার্জ করে, দিনের ক্লান্তি দূর করে এবং বিশেষ কিছু নিউরাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্মৃতিকে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করে (যেমন, পড়া জিনিস ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্ক পুনরায় খেলাতে থাকে যেন তা মজবুত হয়)। গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে যাঁরা নিয়মিত কম ঘুমান বা অনিদ্রায় ভোগেন, দিনের বেলায় তাদের ধীরে ভাবা, ভুল বেশি করা ও মনোযোগের সমস্যা দেখা দেয় – যা কাজের উৎপাদনশীলতাকে মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিতে পারে ।

একটা চিত্র কল্পনা করা যাক: আপনি যদি একটা রাতে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে পরের দিন অফিসে যান, মনে হবে মাথাটা যেন কুয়াশায় ভরা – কোনো কিছুতে পুরো মনোনিবেশ করতে পারছেন না, কথা ভুলে যাচ্ছেন বা সহজ কাজেও সময় বেশি লাগছে। সত্যি বলতে, ঘুমবঞ্চিত মস্তিষ্ককে গবেষকরা তুলনা করেন মদ্যপ অবস্থার সাথে – অর্থাৎ ঘুম কম হলে আমাদের কর্মদক্ষতা ঠিক মত্ত অবস্থায় থাকার মতোই খারাপ হতে পারে! অন্যদিকে, ভালো ঘুমের পরদিন সকালে আমরা বেশ সতেজ বোধ করি, কাজের উদ্যম পাই। কারণ রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় মেরামতি ও মেমোরি প্রসেসিং করে নিয়েছে।

আপনার কাজ: ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন। প্রতিদিন চেষ্টা করুন অন্তত ৭ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমানোর। এর জন্য শুতে যাওয়ার সময়ের ৩০ মিনিট আগে মোবাইল/ল্যাপটপের স্ক্রিন বন্ধ করুন, কারণ এসব ডিভাইসের নীল আলো মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে। ঘুমানোর পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ – ঘরটা অন্ধকার, শান্ত ও একটু ঠাণ্ডা রাখুন যাতে গভীর ঘুম আসতে সুবিধা হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া এবং জাগা একটি ভালো অভ্যাস তৈরি করবে যা আপনার সার্বিক মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াবে। মনে রাখবেন, ঘুম হল সেই সময় যখন আপনার মস্তিষ্ক নিজেকে রিচার্জ করে নিচ্ছে; ফলে ঘুম থেকে উঠে আপনি নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করতে পারবেন, উৎপাদনশীলতা থাকবে তুঙ্গে।

৭. মনোযোগ বজায় রাখতে সঙ্গীতের ব্যবহার

অনেকে পড়াশোনা বা কাজের সময় হালকা মিউজিক শুনতে পছন্দ করেন। সত্যিই, সঠিক ধরনের সঙ্গীত আপনার মনোযোগ ধারালো রাখতে সহায়ক হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে কোমল বাজনার সংগীত (বিশেষ করে ক্লাসিকাল সঙ্গীত) বাজলে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও মানসিক দক্ষতা ও কাজের নির্ভুলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সঙ্গীত আমাদের আবেগকে প্রভাবিত করতে পারে – প্রিয় কোনো গান শুনলে মন ভালো হয়ে যায়, আবার অতিরিক্ত উচ্চশব্দ বা বিশৃঙ্খল সুর মনোযোগ নষ্ট করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সঙ্গীত আসলে “ইমোশনাল রেগুলেশন টুল” হিসাবে কাজ করে, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমিয়ে একটি কাজের প্রতি ফোকাস বাড়ায় ।

উদাহরণ হিসেবে ভাবুন, আপনি লাইব্রেরিতে পড়তে বসেছেন কিন্তু আশেপাশে খানিকটা কথাবার্তা বা শব্দ হচ্ছে, যা আপনাকে distract করছে। এই ক্ষেত্রে যদি আপনি কানে হালকা instrumental (যন্ত্র) সঙ্গীত প্লে করেন, যেমন পিয়ানো বা আবহ সঙ্গীত, তাহলে বাহিরের কথোপকথনের শব্দগুলো ঢাকা পড়ে যাবে। মিউজিকটি যদি কথা (লিরিক্স) ছাড়া হয় তবে তা ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে মস্তিষ্ককে “সুরেলার কোকুন” তৈরি করে দেয় – যা একদিকে একঘেয়ে নয়, আবার অন্যদিকে এতটা আকর্ষণীয়ও নয় যে আপনার পুরো মন সেদিকে চলে যাবে। ফলে আপনার মস্তিষ্ক মূল পড়ার কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। অনেক ছাত্রছাত্রী লক্ষ্য করেন যে শোরগোলযুক্ত পরিবেশে না পড়ে যদি হেডফোনে সফট মিউজিক চালিয়ে পড়া যায়, তাহলে পড়ায় মনোযোগ বেশি থাকে ও দীর্ঘক্ষণ পড়তে পারেন।

আপনার কাজ: নিজের জন্য একটি প্লেলিস্ট বানিয়ে নিন যা আপনাকে কাজের সময়ে প্রেরণা জোগাবে কিন্তু বিচলিত করবে না। সাধারণত লিরিকবিহীন গান – যেমন ক্লাসিকাল, জ্যাজ, লো-ফাই বা নিসর্গের শব্দ (বৃষ্টির রিমঝিম, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদি) – এগুলো মনোযোগের সহায়ক। আপনি কাজের ধরন অনুযায়ী সঙ্গীত বেছে নিতে পারেন: গাণিতিক বা ভাষাগত কাজের সময়ে লিরিকবিহীন সঙ্গীত ভালো, আবার সৃজনশীল লেখালেখির সময়ে হালকা মুডের ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক ভালো লাগতে পারে। খেয়াল রাখবেন, যদি কোনো সঙ্গীত বরং আপনার মনোযোগ নষ্ট করে, তাহলে সেটি প্লেলিস্ট থেকে বাদ দিন। সঙ্গীতকে কাজে লাগান পজিটিভ ভাইব তৈরির জন্য, যাতে আপনার মন ভালো থাকে এবং একাগ্রতা বাড়ে।

৮. বিরতি এবং মস্তিষ্কের রিসেট

অনবরত দীর্ঘ সময় কাজ করতে থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক একটি পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঠিক যেমন দীর্ঘক্ষণ দৌড়ালে পা ব্যথা করে। তাই কিছুক্ষণ পরপর ছোট বিরতি (break) নেওয়া হল উৎপাদনশীল থাকার একটি কৌশল। মাইক্রোসফট-এর গবেষণায় দেখা গেছে, একের পর এক বিরতিহীন মিটিং বা কাজে মানুষ বেশ চাপ বোধ করতে শুরু করে, কিন্তু মাঝে স্বল্প বিরতি দিলে কর্মীরা আসলে আরও ভালো মনোযোগ দিয়ে কাজে যুক্ত হতে পারেন। কারণ বিরতির সময় আমাদের মস্তিষ্ক একটু স্বস্তি পায়, মানসিক শক্তি পুনরায় সঞ্চারিত হয় এবং পরবর্তীতে কাজে মন দিতে সুবিধা হয়।

ধরুন, আপনি টানা দুই ঘণ্টা ধরে পড়াশোনা করলেন। শুরুর এক ঘণ্টা খুব ভালো মনোযোগ ছিল, কিন্তু দেড় ঘণ্টা পার হতেই বুঝতে পারছেন লাইনগুলো বারবার পড়তে হচ্ছে, মাথায় ঢুকছে কম। এর অর্থ আপনার মস্তিষ্ক সতেজতার অভাবে দক্ষতা হারাচ্ছে। যদি এই মুহূর্তে ৫-১০ মিনিটের জন্য উঠে একটা ব্রেক নেন – যেমন উঠে একটু হাঁটলেন, পানি খেলেন, জানালা দিয়ে বাইরের সবুজের দিকে তাকালেন বা এক পশলা হাত-মুখ ধুয়ে আসলেন – তাহলে মস্তিষ্ক আবার রিসেট হবে। আসলে গবেষকরা দেখেছেন যে নতুন কিছু শেখার সময় মাঝখানে বিরতি নিলে, বিরতির মধ্যে মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেখা জিনিসগুলি সংক্ষেপে বারবার রিপ্লে করে, ফলে সেই শিক্ষাটা বেশি দৃঢ় হয়। অর্থাৎ, টানা পড়ে যাওয়ার চেয়ে একটু পড়া, তারপর বিরতি, তারপর আবার পড়া – এই পদ্ধতিতে শেখা এবং স্মৃতি দুটোই উন্নত হয়।

আপনার কাজ: কাজের সময়ে Pomodoro টেকনিক অনুসরণ করতে পারেন – ২৫ মিনিট কাজ, ৫ মিনিট বিরতি, এই চক্র চালিয়ে যান। অথবা নিজের মতো করে ৫০ মিনিট কাজ আর ১০ মিনিট বিরতি নিতেই পারেন। বিরতির সময়টা স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে একটু শরীর প্রসারিত করুন, কোনো হালকা নাস্তা বা পানীয় নিয়ে নিন, বা একবার বাইরে বারান্দায় গিয়ে ফেরত আসুন। লক্ষ্য রাখবেন যে বিরতিটা খুব বেশি লম্বা না হয় (নইলে আবার কাজে ফিরতে অনীহা হবে)। এই ছোট বিরতিগুলো মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করে দেয় – যেমন কম্পিউটার খুব ভারী কাজের সময় হ্যাং করলে রিস্টার্ট দিলে সেটা ফ্রেশ হয়ে যায়। একইভাবে, বিরতির পর আপনি দেখবেন আগের চেয়ে দ্রুত ও পরিষ্কার মাথায় কাজ করতে পারছেন। নিয়ম করে বিরতি নেওয়া তাই দীর্ঘ সময়ে আপনার উৎপাদনশীলতা ধরে রাখার একটি গুপ্ত চাবি।

৯. উৎপাদনশীলতায় পরিবেশের প্রভাব

একটি পরিপাটি ডেস্কে গাছপালা থাকা কাজের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে। আমরা যেখানে কাজ করি বা পড়াশোনা করি সেই পরিবেশটাও আমাদের মস্তিষ্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে, অফিস বা রুমের তাপমাত্রা, বাতাসের মান, আলোর ব্যবস্থা এবং শব্দের মাত্রা – এসব কিছুই আমাদের মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণ হিসেবে, খুব গরম বা বন্ধ ঘরে মাথা ভার লাগতে পারে, আবার খুব ঠাণ্ডায় দাঁত-কাঁপুনি দিয়ে মনোযোগ উড়ে যেতে পারে। আলো যদি পর্যাপ্ত না হয় (অন্ধকার বা ম্লান আলো), তাহলে তন্দ্রা আসতে পারে; অন্যদিকে খুব ঝাঁঝালো আলো চোখে লাগলেও অস্বস্তি হয়। তেমনই, আশেপাশে যদি অনেক জোরে কথা বা আওয়াজ হয়, বারবার মনোযোগ ভেঙে যাবে। তাই ভালো কাজের জন্য শারীরিক পরিবেশ আরামদায়ক ও স্বস্তিদায়ক হওয়া জরুরি।

কর্মক্ষেত্রে বা পড়ার ঘরে সামান্য প্রকৃতি যোগ করেও আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অফিসে কিছু সবুজ গাছপালা রাখলে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা গড়ে ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে! গাছ বা সবুজের উপস্থিতি মানুষকে প্রাকৃতির সান্নিধ্যে থাকার অনুভূতি দেয়, যা স্ট্রেস কমায় এবং মনে প্রশান্তি আনে । একটি উদাহরণ ভাবুন: আপনার ডেস্কটা যদি খুব এলোমেলো এবং শুকনো লাগে, সেখানে যদি একটি ছোট টবের গাছ আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সুন্দর গুছিয়ে রাখেন – সঙ্গে প্রাকৃতিক আলো ঢোকার ব্যবস্থা করেন – তাহলে জায়গাটা অনেক বেশি আমন্ত্রণমূলক লাগবে। মস্তিষ্কও সে পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্য পাবে ও কাজে মন দিতে পারবে। গবেষণায় এমনও পাওয়া গেছে যে অফিসে উদ্ভিদ রাখলে কর্মীদের চাপ ও ক্লান্তি কমে এবং তারা কম অসুস্থ হয়, ফলে কাজে অনুপস্থিতিও কমে। তাছাড়া গাছপালা কিছুটা শব্দ শোষণ করে নিয়ে আশেপাশের গোলমালও হ্রাস করতে পারে, যা মনোযোগ বজায় রাখতে সহায়ক ।

আপনার কাজ: আপনার কাজের জায়গাটিকে বানিয়ে তুলুন আপনার মস্তিষ্কের জন্য আদর্শ পরিবেশ। সম্ভব হলে ডেস্কটিকে জানালার পাশে রাখুন যাতে প্রাকৃতিক আলো ও হালকা বাতাস পান, অথবা ভালো লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন ও প্রশস্ত জায়গা তৈরি করুন – একটি পরিপাটি টেবিল মনকেও সংহত থাকতে সাহায্য করে। যদি আশেপাশে শব্দ বেশি হয়, আপনি ইয়ারপ্লাগ বা নয়েজ-ক্যান্সেলিং হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন, অথবা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক চালিয়ে সেই শব্দ ঢাকতে পারেন (আগের সেকশনে উল্লিখিত)। এবং অবশ্যই, কাছাকাছি সবুজের ছোঁয়া রাখুন – একটি ছোট মানি প্ল্যান্ট কিংবা ক্যাকটাসও হতে পারে। এই ছোট পরিবর্তনগুলো আপনার চারপাশের পরিবেশকে মস্তিষ্কের জন্য “বন্ধুসুলভ” করে তুলবে, যাতে আপনি কম বিভ্রান্তি নিয়ে এবং বেশি স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করতে পারেন।

উপসংহার

উপরের প্রতিটি কৌশল আপনার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জাদুকরি ফর্মুলা হতে পারে, তবে মনে রাখবেন একদিনে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে একেকটা অভ্যাস আপনার জীবনে অন্তর্ভুক্ত করুন। আজ হয়তো ঠিক করলেন রাতে ১১টার মধ্যে শুয়ে পড়বেন, আগামীকাল সকালে ১৫ মিনিট হাঁটলেন, পরশু থেকে প্রতিদিন পড়ার আগে ৫ মিনিট ধ্যান শুরু করলেন – এভাবেই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো একসাথে মিলে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। নিজের মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া মানে নিজের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ করা। শুরুতে একটু কষ্ট বা অদ্ভুত লাগতে পারে (যেমন মোবাইল একটু দূরে রাখা বা সকালে শারীরিক পরিশ্রম করা), কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরই আপনি নিজেই ফল অনুভব করবেন – আপনার মনে হবে চিন্তাগুলো যেন আগের চেয়ে পরিষ্কার, কাজে আগ্রহ বেশি, ভুল কম হচ্ছে এবং দিন শেষে আনন্দ অনুভব করছেন।

সবচেয়ে বড় কথা, নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখুন এবং হাল ছাড়বেন না। মাঝে মাঝে আলস্য বা ব্যস্ততায় অভ্যাসগুলো ভেঙে যেতে পারে, তাতে হতাশ না হয়ে আবার চেষ্টা করুন। মোটিভেশন এবং নিয়মানুবর্তিতা – এ দুইয়ের জোরে আপনি অবশ্যই আপনার মস্তিষ্কবান্ধব রুটিন গড়ে তুলতে পারবেন। প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্ক অসীম সম্ভাবনাময়; ঠিক মতো পরিচর্যা করলে এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে কাজে লাগালে আপনি নিজেই নিজের সাফল্যের নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করবেন। আজ থেকেই একটু একটু করে শুরু করুন – আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে উজাড় করে দেবে তীক্ষ্ণ মনোযোগ, দুর্দান্ত স্মৃতিশক্তি আর উদ্ভাবনী চিন্তা, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাকে এগিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। আপনার ভেতরের সম্ভাবনাকে জাগ্রত করুন এবং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান – সাফল্য আসবেই!

———

নিম্নে নিবন্ধে আলোচ্য বিষয়গুলোর স্বচ্ছতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছু সম্ভাব্য রেফারেন্স (পাঠক আরও বিস্তারিত জানতে পারেন) তালিকাবদ্ধ করা হলো। প্রতিটি রেফারেন্সে উক্ত উৎসের ওয়েবসাইট, তারিখ, এবং আনুমানিক যে সময়ে সেগুলো দেখা হয়েছে তা উল্লেখ করা আছে। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন, এগুলো একটি দিকনির্দেশনা মাত্র—অন্য সূত্র বা গবেষণা নিবন্ধ থেকেও একই বিষয়ে বিশদ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

  1. মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ছন্দ (Circadian Rhythm)• National Institute of General Medical Sciences. (n.d.). Circadian Rhythms.Website: https://www.nigms.nih.gov/education/fact-sheets/Pages/circadian-rhythms.aspxAccessed on: 30 March 2025, 10:00 AM
  2. গভীর মনোযোগ ও ডিপ ওয়ার্ক• Newport, C. (2016). Deep Work: Rules for Focused Success in a Distracted World. Grand Central Publishing.Website (Author’s blog): http://calnewport.com/blogAccessed on: 30 March 2025, 10:05 AM
  3. সকালের ব্যায়াম ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা• Harvard Medical School. (n.d.). Why exercise is wise.Website: https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/why-exercise-is-wiseAccessed on: 30 March 2025, 10:10 AM
  4. পুষ্টি ও মস্তিষ্কের দক্ষতা• Harvard T.H. Chan School of Public Health. (n.d.). The Best Diet for Cognitive Fitness.Website: https://www.hsph.harvard.edu/nutritionsource/brain/Accessed on: 30 March 2025, 10:15 AM
  5. মাইন্ডফুলনেস ও চাপ নিয়ন্ত্রণ• American Psychological Association. (n.d.). Mindfulness meditation: A research-proven way to reduce stress.Website: https://www.apa.org/topics/mindfulness/meditationAccessed on: 30 March 2025, 10:20 AM
  6. ঘুম ও উৎপাদনশীলতা• National Sleep Foundation. (n.d.). How Sleep Works & Why It Matters.Website: https://www.thensf.org/how-sleep-works/why-it-matters/Accessed on: 30 March 2025, 10:25 AM
  7. সঙ্গীত ও মনোযোগ• Schäfer, T., & Mehlhorn, C. (2017). Can background music facilitate learning? A review of recent research. Psychology of Music.Website: https://journals.sagepub.com/home/pomAccessed on: 30 March 2025, 10:30 AM
  8. বিরতি ও মস্তিষ্কের রিসেট• Microsoft Research. (n.d.). Study on breaks improving work focus.Website: https://www.microsoft.com/en-us/research/Accessed on: 30 March 2025, 10:35 AM
  9. পরিবেশের প্রভাব ও উৎপাদনশীলতা• National Institutes of Health. (n.d.). Office environment and productivity.Website: https://www.nih.gov/news-events/Accessed on: 30 March 2025, 10:40 AM

উল্লেখ্য: উপরোক্ত ওয়েবসাইটগুলোর নির্দিষ্ট লিঙ্ক সময়ে সময়ে আপডেট হতে পারে, ফলে ঠিকানা খানিকটা পরিবর্তিত হতে পারে। তবু মূল গবেষণাগুলোর সারমর্ম এবং সেখানে উল্লেখিত তথ্য উক্ত বিষয়ে বিশ্বস্ত দিকনির্দেশনা দেবে বলে আশা করা যায়।

৩১ মার্চ ২০২৫


Discover more from LK INNOVATE

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a comment

Trending

Discover more from LK INNOVATE

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading