ড. লোকমান খান, বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ

ভূমিকা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন দেশের সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে তাদের নিজস্ব অবস্থান ও মতামত পেশ করেছে। এই প্রতিবেদনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রস্তাবনা এবং বিএনপি যে অবস্থান নিয়েছে তার মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যগুলো বিশ্লেষণ করা হবে। সরকার-নিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন কমিশনের সুপারিশ এবং বিএনপির মতামত উভয়ই জনগণের আগ্রহের বিষয়; তাই বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করা হবে যাতে একজন সাধারণ পাঠক সহজে পার্থক্যগুলো বুঝতে পারেন। নিচে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে কমিশনের প্রস্তাবনা বনাম বিএনপির অবস্থান তুলনা করে দেখানো হলো।

রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি ও সংবিধানের প্রস্তাবনা

কমিশনের সুপারিশ: সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৯৭২ সালের মূল চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতিকে পুনর্বিবেচনা করে নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছে। কমিশন প্রস্তাব করেছে যে সংবিধানের মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা অপসারণ করা হোক এবং তার পরিবর্তে সমতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করা হোক (oai_citation_attribution:0‡mzamin.com)। এর ফলে রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি পুনর্গঠিত হবে। পাশাপাশি কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনায় ২০২৪ সালের “জুলাই গণঅভ্যুত্থান”কে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সমতুল্যভাবে উল্লেখ করতে চেয়েছে (oai_citation_attribution:1‡bdnews24.com)। অর্থাৎ সংবিধানের ভূমিকায় সদ্য সংঘটিত গণআন্দোলনকে ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে সংযোজনের প্রস্তাব করেছে কমিশন (oai_citation_attribution:2‡newagebd.net)।

বিএনপির অবস্থান: বিএনপি এসব আদর্শিক পরিবর্তনের বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। দলটির মতে, এতবড় ভিত্তিগত পরিবর্তন যথোপযুক্ত নয়। বিএনপি চায় সংবিধানের মূলনীতিসমূহ ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক, অর্থাৎ আগের মতই জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র মূলনীতিতে থাকুক (oai_citation_attribution:3‡mzamin.com)। কমিশন যখন বহুত্ববাদসহ নতুন নীতি সংযোজনের কথা বলছে, বিএনপি তখন বর্তমান (বা প্রাক-২০১১) মূলনীতিই বহাল রাখতে চায় (oai_citation_attribution:4‡mzamin.com)। প্রস্তাবনায় ২০২৪ সালের গণআন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সমপর্যায়ে স্থান দেওয়ার বিষয়টিও বিএনপি “অপ্রয়োজনীয় ও অনুপযুক্ত” বলে মনে করে। তাদের মতে সংবিধানের মূল প্রস্তাবনা অপরিবর্তিত রাখা উচিত এবং চাইলে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ আলাদা অধ্যায় বা তফসিলে উল্লেখ করা যেতে পারে (oai_citation_attribution:5‡bdnews24.com oai_citation_attribution:6‡newagebd.net)। মোটকথা , আদর্শিক ক্ষেত্রে কমিশন বাংলাদেশের রাষ্ট্রচরিত্রে যে আমূল পরিবর্তন আনতে চায়, বিএনপি তা মানতে নারাজ এবং প্রতিষ্ঠিত মৌলিক নীতি ও ঐতিহাসিক বর্ণনাই বজায় রাখতে আগ্রহী।

রাষ্ট্রের নাম ও নাগরিকত্ব

কমিশনের সুপারিশ: রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম বাংলায় পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে কমিশন থেকে। বর্তমানে সংবিধানে বাংলায় দেশকে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” বলা হয়; কমিশন এটি পাল্টে “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” করার সুপারিশ করেছে (oai_citation_attribution:7‡bdnews24.com)। ইংরেজিতে অবশ্য আগের মতই People’s Republic of Bangladesh রাখা হবে বলে কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ ছিল। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব পরিচয় সংক্রান্ত সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে কমিশন। বর্তমানে সংবিধানে বলা আছে “বাংলাদেশের জনগণ বাঙালি হিসাবে পরিচিত হবেন”; কমিশন চায় ভবিষ্যতে জনগণ “বাংলাদেশী” নামে পরিচিত হোক – অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় “বাঙালি” থেকে বদলে “বাংলাদেশী” করা (oai_citation_attribution:8‡en.wikipedia.or)। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে জাতিগত পরিচয়ের বদলে নাগরিকত্বের ভিত্তিতে পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।

বিএনপির অবস্থান: রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বিএনপি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির মতে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামটি দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত এবং জনগৃহীত; তাই “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” বা এ ধরনের নতুন নামকরণের কোনো প্রয়োজন নেই (oai_citation_attribution:9‡bdnews24.com)। সংবিধানের বাংলায় রাষ্ট্রের নাম অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে বিএনপি মত দিয়েছে। নাগরিকদের পরিচয় প্রসঙ্গে, “বাংলাদেশী” পরিচয় বিষয়টিতে বিএনপি আপত্তি তুলেনি বরং আদর্শগতভাবে এটি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রবর্তিত “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” ধারণার ভিত্তিতেই বিএনপি প্রতিষ্ঠিত, যেখানে রাষ্ট্রের নাগরিকরা জাতিগতভাবে যে কেউ হোন না কেন, সবাইকে “বাংলাদেশী” পরিচয়ে অভিহিত করার উপর জোর দেওয়া হয়। ফলে কমিশন যখন সংবিধানে নাগরিক পরিচয় “বাংলাদেশী” করার কথা বলছে, বিএনপি আসলে এই প্রস্তাবের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলে ধারণা করা যায় (oai_citation_attribution:10‡en.wikipedia.org)। বাস্তবে বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনাতেও নাগরিক পরিচয় “বাংলাদেশী” করার কথা উল্লেখ ছিল বলে জানা যায় (oai_citation_attribution:11‡en.wikipedia.org)। তাই রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে দ্বিমত থাকলেও নাগরিকত্বের পরিচয় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কমিশন ও বিএনপি অভিন্ন অবস্থানেই আছে।

মৌলিক অধিকার ও সাংবিধানিক সংশোধনী

কমিশনের সুপারিশ: বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের নির্দেশনামূলক নীতিসমূহ (অধ্যায়-২) এবং মৌলিক অধিকারসমূহ (অধ্যায়-৩) পৃথক অংশে রয়েছে। কমিশন প্রস্তাব করেছে যে এই দুটি অংশ একত্রিত করে “মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা” শীর্ষক একক অধ্যায় তৈরি করা হোক যা আদালতে প্রয়োগযোগ্য হবে (oai_citation_attribution:12‡en.wikipedia.org)। এর ফলে নাগরিকদের সামাজিক-আর্থিক অধিকার ও রাজনৈতিক-নাগরিক অধিকারগুলো একই সমতায় সংরক্ষণ পাবে। কমিশন বেশ কিছু নতুন অধিকার সংবিধানে যুক্ত করারও প্রস্তাব করেছে, যেমন: খাদ্যের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, তথ্য পাওয়ার অধিকার, ভোটাধিকার, উন্নয়ন ও পরিবেশের অধিকার ইত্যাদি (oai_citation_attribution:13‡en.wikipedia.org)। এসব অধিকার সংবিধানে যুক্ত হলে নাগরিকরা আইনগতভাবে এসবের দাবী করতে পারবেন। তদুপরিবর্তে, সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াতেও কমিশন কিছু নতুন ধারণা এনেছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কোনো বড় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গণভোট (রেফারেন্ডাম) আয়োজনের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, যাতে জনগণের প্রত্যক্ষ সম্মতি থাকে (oai_citation_attribution:14‡bdnews24.com)। এমনকি কমিশনের কিছু সদস্য সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের প্রয়োজনে নতুন সংবিধান সভা আহ্বানেরও পক্ষে মত দিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে (oai_citation_attribution:15‡bdnews24.com)। সংক্ষেপে, কমিশন অধিকার প্রসার ও সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ব্যাপক ও প্রগ্রেসিভ পদ্ধতি নিতে বলছে।

বিএনপির অবস্থান: মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও পুনর্বিন্যাস বিষয়ে বিএনপি সংযত দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। দলটি পৃথকভাবে নাগরিক-রাজনৈতিক অধিকার বনাম সামাজিক-আর্থিক অধিকার সমান্তরালে মেশাতে আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপির মতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার বাস্তবায়ন অনেকটাই রাষ্ট্রের সামর্থ্য ও নীতিনির্ভর, সুতরাং এগুলোকে একই সাথে মৌলিক অধিকার হিসেবে আদালতে কার্যকর করা জটিল এবং বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে (oai_citation_attribution:16‡bdnews24.com)। নতুন একটি অধ্যায় তৈরি করে এ两 ধরনের অধিকার একত্রিত করার প্রস্তাবে বিএনপি দ্বিমত পোষণ করেছে এবং সতর্ক করে বলেছে যে এতে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে (oai_citation_attribution:17‡bdnews24.com)। সংবিধান বদলের ব্যাপারে বিএনপি সামগ্রিকভাবে ধীরগতিসম্মত এবং প্রথাগত পন্থার পক্ষে। দলটি স্পষ্ট বলেছে যে নতুন কোনো সংবিধান প্রণয়নের জন্য পৃথক গণপরিষদ গঠনের দরকার নেই – বাংলাদেশ নতুন রাষ্ট্র নয় যে নতুন সংবিধান লাগবে (oai_citation_attribution:18‡bdnews24.com)। বরং বিদ্যমান সংবিধানেই প্রয়োজনে সংশোধনী আনতে হবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে। সাংবিধানিক যেকোনো পরিবর্তনের জন্য তারা বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ১৪২-এর আওতায় সংসদীয় পদ্ধতিই যথেষ্ট মনে করে, যেখানে কিছু ক্ষেত্রে গণভোটের ব্যবস্থাও ইতোমধ্যে রয়েছে (oai_citation_attribution:19‡bdnews24.com)। তাই কমিশনের আলাদা করে গণভোটের সুপারিশকেও বিএনপি জরুরি মনে করছে না। বিশেষ করে কমিশনের প্রস্তাব ছিল সংসদের দুই কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেলেও কিছু মৌলিক পরিবর্তনের জন্য গণভোট নিতে হবে – বিএনপি এই অতিরিক্ত গণভোটের দরকারিয়াত স্বীকার করেনি (oai_citation_attribution:20‡mzamin.com)। তাদের মত, আগে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক; তারপর প্রয়োজন হলে পার্লামেন্টে আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধনীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জনগণের মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে (oai_citation_attribution:21‡bdnews24.com)। সারসংক্ষেপে, অধিকারের প্রসার ও সংস্কারের যে উদার দৃষ্টিভঙ্গি কমিশন নিয়েছে, বিএনপি তাতে আংশিক সমর্থন জানালেও বাস্তবায়নযোগ্যতা ও প্রক্রিয়ার প্রশ্নে অনেক প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে।

সংসদীয় কাঠামো ও মেয়াদ

কমিশনের সুপারিশ: শাসনব্যবস্থায় ভারসাম্য আনতে কমিশন সংসদীয় কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। তারা এককক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের পরিবর্তে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সুপারিশ করেছে (oai_citation_attribution:22‡en.wikipedia.org)। প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যমান জাতীয় সংসদটিকে “নিম্নকক্ষ” (জাতীয় পরিষদ) হিসেবে রাখা হবে এবং নতুন একটি “উচ্চকক্ষ” বা সিনেট সৃষ্টি করা হবে (oai_citation_attribution:23‡en.wikipedia.org)। উচ্চকক্ষে ১০৫ জন সদস্য থাকবেন, যার মধ্যে ১০০ জন রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে মনোনীত হবেন (এবং মোট ভোটের ন্যূনতম ১% অর্জনকারী দল উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব পাবে) (oai_citation_attribution:24‡en.wikipedia.org)। অবশিষ্ট ৫টি আসন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অদলীয় বিশিষ্ট নাগরিকদের মাধ্যমে পূরণ করার প্রস্তাব ছিল (oai_citation_attribution:25‡en.wikipedia.org)। এই দ্বিকক্ষ সংসদের প্রতিটি কক্ষের মেয়াদ ৪ বছর রাখার কথা বলেছে কমিশন (oai_citation_attribution:26‡en.wikipedia.org)। অর্থাৎ প্রতি ৪ বছর অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে – যা বর্তমান ৫ বছরের চক্র থেকে সংক্ষিপ্ত। এছাড়া, সাংসদদের স্বাধীন মতপ্রকাশের বাধা কমাতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ (যা দলত্যাগ ও বিপরীতমুখী ভোটাভুটিতে সাংসদের আসন হারানোর বিধান) সংশোধনের প্রস্তাবও কমিশন বিবেচনা করেছে। কমিশন মনে করে সংসদকে কার্যকর করতে কিছু ক্ষেত্রে দলীয় হুইপের বাইরে গিয়ে এমপিদের স্বাধীনভাবে ভোটদানের সুযোগ থাকা উচিত – বিশেষ করে আস্থা ভোট বা গুরুত্বপূর্ণ বিলের সময় (oai_citation_attribution:27‡en.prothomalo.com)।

বিএনপির অবস্থান: দ্বিকক্ষ সংসদের ধারণাটি বিএনপি সমর্থন করেনি। তারা স্পষ্ট করেছে যে বর্তমানে যে এককক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ ব্যবস্থা রয়েছে, সেটিই যথেষ্ট এবং নতুন উচ্চকক্ষ সৃষ্টির প্রয়োজন নেই (oai_citation_attribution:28‡bdnews24.com)। BNP দ্বিকক্ষ ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেছে এবং পরিবর্তে বিদ্যমান সংসদকেই আরও প্রতিনিধি করতে কিছু পদক্ষেপের পক্ষে মত দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার প্রস্তাব কমিশন দিলে বিএনপি তাতে সম্মতি জানিয়েছে (oai_citation_attribution:29‡bdnews24.com), যাতে এককক্ষ সংসদেই নারীদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পায়। সংসদের মেয়াদ বিষয়ে বিএনপি কমিশনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। কমিশন যেখানে সংসদের মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪ বছর করার পক্ষে, বিএনপি স্পষ্টভাবে বলেছে সংসদের পূর্ণ মেয়াদ ৫ বছরই থাকা উচিত (oai_citation_attribution:30‡banginews.com oai_citation_attribution:31‡mzamin.com)। তাদের মতে স্থিতিশীল শাসন ও নীতিনির্ধারণের ধারাবাহিকতার জন্য ৫ বছর একটি সমীচীন সময় এবং ঘন ঘন নির্বাচন দেশে অস্থিরতা বাড়াতে পারে। অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের ভোটদানে আরও স্বাধীনতা প্রদানের ব্যাপারেও বিএনপির সমর্থন মেলেনি। বড় রাজনৈতিক দলগুলো – যার মধ্যে বিএনপিও রয়েছে – মনে করে আস্থা ভোট বা বাজেট পাসের মতো বিষয়গুলোতে দলীয় ঐক্য ভঙ্গ করার সুযোগ দিলে সরকার ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হবে (oai_citation_attribution:32‡en.prothomalo.com)। বিএনপি তাই সাংসদদের দলীয় নির্দেশনার বিপরীতে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা বৃদ্ধির প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। যদিও গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার যুক্তিতে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তবু বিএনপি চায় এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিদ্যমান ব্যবস্থা (দলত্যাগে আসন হারানো বিধান) বজায় থাকুক। সার্বিকভাবে, সংসদীয় কাঠামোয় বিএনপি সংস্কারের নামে খুব বেশি পরিবর্তন আনতে রাজি নয়, বরং বিদ্যমান পদ্ধতিকে সামান্য পরিমার্জন ও শক্তিশালী করার পক্ষে।

নির্বাহী বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা

কমিশনের সুপারিশ: বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর উপর অত্যন্ত কেন্দ্রিভূত। কমিশন প্রধানমন্ত্রীর এই “অবিশ্বাস্য ক্ষমতা” কমিয়ে ভারসাম্য আনার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব করেছে। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর পদে কারও সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি থাকার সুযোগ না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে (oai_citation_attribution:33‡mzamin.com)। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দু’বারই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন (ক্রমাগত বা বিচ্ছিন্ন – যেকোনো অবস্থাতেই দুইবারের বেশি নয়) (oai_citation_attribution:34‡mzamin.com)। এতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনের অবসান হবে বলে ধারণা। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতার পদ দলের প্রধানের পদ থেকে আলাদা রাখতে চায় কমিশন (oai_citation_attribution:35‡banginews.com)। প্রস্তাব অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সেই ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন/সভাপতি হতে পারবেন না, যেন নির্বাহী প্রধানের ভূমিকা ও দলে নেতৃত্বের ভূমিকা পৃথক হয় (oai_citation_attribution:36‡banginews.com)। এটি দলীয় কর্ণধারদের অতিরিক্ত ক্ষমতা কমানোর একটি পদক্ষেপ। তৃতীয়ত, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মাঝে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার ইঙ্গিতও কমিশন দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ রাষ্ট্রপতির নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন (নিম্নকক্ষ-উচ্চকক্ষ মিলে এক প্রকার Electoral College গঠন) এবং জরুরি অবস্থার সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নাগরিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কমিশনের সুপারিশে (oai_citation_attribution:37‡en.wikipedia.org oai_citation_attribution:38‡en.wikipedia.org)। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৪ বছর এবং সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ সীমিত করার কথাও কমিশন বলেছে (oai_citation_attribution:39‡en.wikipedia.org)। এ সকল উদ্যোগ মূলত ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন কমিয়ে শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএনপির অবস্থান: প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস বা সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাবগুলোয় বিএনপি বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করেছে। দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদ সীমাবদ্ধকরণ প্রসঙ্গে বিএনপি সরাসরি একমত নয়। কমিশনের কঠোর প্রস্তাব (“কেউ জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না”) এর বিপরীতে বিএনপি একটি বিকল্প মত দিয়েছে (oai_citation_attribution:40‡mzamin.com): তারা চায়, কেউ পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, তবে টানা দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ করা যাবে (oai_citation_attribution:41‡mzamin.com)। অর্থাৎ বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দুই মেয়াদ ক্রমাগত সীমা সমর্থন করে, কিন্তু সারাজীবনের জন্য দু’বার সীমা সমর্থন করে না। এই অবস্থান থেকে বোঝা যায় যে বিএনপি ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের ফিরে আসার সুযোগ রাখতে চায়, কেবল টানা একাধিকার শাসনের বিরোধিতা করছে (oai_citation_attribution:42‡mzamin.com)। একইভাবে, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদ আলাদা করার বিষয়টিতে বিএনপি রাজি হয়নি। তাদের মতে, এটি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় যে দলনেতা এবং সরকারপ্রধান একই ব্যক্তি হবেন কিনা; এ ধরনের বিধিনিষেধ সংবিধানে আরোপ করা সংসদীয় গণতন্ত্রের চেতনার সাথে সংগতিপূর্ণ নয় বলে BNP মনে করে (oai_citation_attribution:43‡banginews.com)। বিএনপির ব্যাখ্যা ছিল যে এক ব্যক্তি একাধিক ভূমিকা পালন করবে কিনা তা দলগত সিদ্ধান্তের বিষয় – এটিতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আরোপ সঠিক নয় (oai_citation_attribution:44‡banginews.com)।

নির্বাহী বিভাগে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রসঙ্গে বিএনপি কিছু প্রস্তাব সমর্থন করলেও অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অভিপ্রায় অনুযায়ী বদল চায়। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের মাধ্যমে বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার প্রভৃতি নিয়োগের যে প্রক্রিয়া কমিশন সুপারিশ করেছে, বিএনপি তার ঘোর বিরোধিতা করেছে (oai_citation_attribution:45‡mzamin.com)। বিএনপির মতে এ ধরনের অনির্বাচিত কাউন্সিল গঠন জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাকে খর্ব করবে এবং সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মূল চেতনার বিরোধী (oai_citation_attribution:46‡bdnews24.com)। বিএনপি চায় এইসব গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় সংসদীয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ঠিক করা হোক, যেখানে নির্বাচিত সরকার পরোক্ষভাবে কর্তৃত্ব বজায় রাখবে (oai_citation_attribution:47‡mzamin.com)। বাস্তবে, এর অর্থ হলো বিএনপি বিদ্যমান ব্যবস্থাই রাখতে চায় যেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশন ইত্যাদির নিয়োগ হয় – কোন আলাদা স্বাধীন কাউন্সিলের প্রয়োজন নেই (oai_citation_attribution:48‡mzamin.com)। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংসদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে করার প্রস্তাবেও বিএনপি দ্বিমত দিয়েছে। তাদের মত অনুযায়ী সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মাধ্যমেই (এবং বিদ্যমান প্রক্রিয়ায়) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়া উচিত; নতুন পদ্ধতি “সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়” বলে বিএনপি মতামতে জানিয়েছে (oai_citation_attribution:49‡mzamin.com)। এছাড়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের মেয়াদ ৪ বছরে নামিয়ে আনার সুপারিশেও বিএনপি একমত হয়নি – তারা উল্লেখ করেছে যে এই পদগুলোতে ৫ বছর মেয়াদ বজায় রাখাই যুক্তিসংগত (oai_citation_attribution:50‡mzamin.com)।

সারসংক্ষেপে, কমিশন নির্বাহী বিভাগে যে কাঠামোগত পরিবর্তন (প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, দ্বিধর উচ্চপদস্থ কাউন্সিল গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরিবর্তন) আনার কথা বলেছে, তার বেশিরভাগের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। বিএনপি কিছু কিছু প্রস্তাব আংশিক সমর্থন করলেও সামগ্রিকভাবে তারা ব্যবস্থার বড় ধরনের পরিবর্তন না করে স্বল্পপরিসরের সংস্কারে বিশ্বাস রাখে, যেখানে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব ও ফ্লেক্সিবিলিটি অনেকটাই অক্ষুণ্ণ থাকে।

নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার

কমিশনের সুপারিশ: নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশন সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুরূপ) ব্যবস্থার প্রস্তাব পুনঃপ্রবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে সংসদের মেয়াদ শেষ হলে বা সংসদ ভেঙে দিলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ নেওয়া পর্যন্ত একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ করতে হবে (oai_citation_attribution:51‡en.wikipedia.org)। এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে “প্রধান উপদেষ্টা” (চীফ এডভাইজার) উপাধি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং সেই সরকার সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য দায়িত্ব পালন করবে (oai_citation_attribution:52‡en.wikipedia.org)। কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)-এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করা হবে এবং সে পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে আরও উপদেষ্টা নিয়োগ করবে (oai_citation_attribution:53‡dhakatribune.com)। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল যে নির্বাচনকালীন সরকারকে শুধু রুটিন কাজ নয়, নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে জরুরি কিছু আইন ও বিধিমালা সংশোধন ও প্রশাসনিক রদবদল করার ক্ষমতাও দেওয়া যেতে পারে (oai_citation_attribution:54‡dhakatribune.com)। কমিশনের ধারণা ছিল যে এর মাধ্যমে নির্বাচনের পূর্বের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার ঠেকানো যাবে।

বিএনপির অবস্থান: বিএনপি বহুদিন ধরে জাতীয় নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে আসছে। ফলে অন্তর্বর্তী নির্বাচনকালীন সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মৌলিক ধারণায় দলটি সমর্থক (oai_citation_attribution:55‡dhakatribune.com)। তবে কমিশনের প্রস্তাবিত কাঠামোর কিছু দিক নিয়ে বিএনপির স্পষ্ট আপত্তি ও শর্ত রয়েছে। প্রথমত, বিএনপি বলেছে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার শুধুমাত্র নিয়মিত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে; কমিশনের মত অনুযায়ী অতিরিক্ত আইন সংস্কার বা বড় ধরনের প্রশাসনিক রদবদলের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশকে তারা সমর্থন করেনি (oai_citation_attribution:56‡dhakatribune.com)। বিএনপির যুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ হলো অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, কোনো নীতিগত সংস্কার করা নয়। দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মনোনয়নের জন্য কমিশন যে স্থায়ী এনসিসি প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, বিএনপি তা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য মনে করে না (oai_citation_attribution:57‡dhakatribune.com)। এ ধরনের পরিবর্তনকে বিএনপি সাংবিধানিক ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছে, যেটি ঠিক করতে নির্বাচিত সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত (oai_citation_attribution:58‡dhakatribune.com)। অর্থাৎ, তারা চায় এ বিষয়ে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এবং সংসদ সিদ্ধান্ত নিক, এখনই নয়। সম্ভবত বিএনপি পূর্ববর্তি পদ্ধতি (সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার পুরনো নিয়ম) অথবা রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ব্যক্তিচয়নের পক্ষে আছে, কমিশনের সুপারিশকৃত নতুন কাউন্সিলের পক্ষে নয়। তৃতীয়ত, বিএনপি জোর দিয়ে বলেছে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে শুধুমাত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচনই হবে; স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো বিষয় এতে যুক্ত করা যাবে না (oai_citation_attribution:59‡dhakatribune.com)। কমিশনের কোনও সুপারিশ যদি থেকে থাকে যে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন সেরে নিতে হবে, বিএনপি তা নাকচ করেছে। তাদের মতে, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন হওয়া বাধ্যতামূলক, তাই এর ভেতরে অন্য কোনো নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ নেই (oai_citation_attribution:60‡dhakatribune.com)।

সারাংশ হলো, নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কমিশন ও বিএনপি দুপক্ষই একমত যে এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু এর কার্যপরিধি ও গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কমিশন কিছু অতিরিক্ত ক্ষমতা ও নতুন নিয়োগব্যবস্থা চাইলেও বিএনপি চায় মূলত ১৯৯৬-২০০৮ সালের পরীক্ষিত তত্ত্বাবধায়ক ফর্মুলার কাছাকাছি একটি ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনতে, যেখানে নির্বাচনকালীন সরকার শুধু নির্বাচনের কাজই করবে এবং বড় কোনো নীতি পরিবর্তন করবে না (oai_citation_attribution:61‡dhakatribune.com)।

বিচার বিভাগ ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান

কমিশনের সুপারিশ: রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে কমিশন বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল উচ্চপদস্থ নিয়োগের জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (NCC) গঠন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, সংসদের স্পিকার প্রমুখকে নিয়ে গঠিত এই কাউন্সিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার, মহাহিসাব নিরীক্ষকসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবে (oai_citation_attribution:62‡en.wikipedia.org oai_citation_attribution:63‡en.wikipedia.org)। উদ্দেশ্য হলো, ঐসব নিয়োগে কোনো একক ব্যক্তির চেয়ে যৌথভাবে একটি নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। তদুপরি, নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা তাদের শপথ ভঙ্গ বা গুরুতর কর্তব্যে ব্যর্থ হলে সংসদের একটি স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন (oai_citation_attribution:64‡dhakatribune.com)। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশ হলো নিম্ন আদালতগুলোকে প্রশাসনিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা – যাতে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয় (oai_citation_attribution:65‡bdnews24.com)। এছাড়া বিচারপতিদের জবাবদিহিতার জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় পরিষদ গঠনের কথাও এসেছে, যেন বিচারপতিদের নিয়োগ ও শৃঙ্খলা কার্যক্রম একটি স্বতন্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে হয় (oai_citation_attribution:66‡bdnews24.com)। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সরকারি প্রশাসন সংস্কার সম্পর্কেও অন্যান্য কমিশনের অনেক প্রস্তাব রয়েছে, যেমন সরকারি উচ্চপদে পদোন্নতিতে মেধার ভিত্তিতে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বা নিয়োগ কাঠামো সংস্কার ইত্যাদি। সামগ্রিকভাবে, এগুলো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ও সুশাসন বৃদ্ধি করে নির্বাহী বিভাগের একক কর্তৃত্ব কমানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

বিএনপির অবস্থান: বিএনপি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবকে আগেই নাকচ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে (oai_citation_attribution:67‡bdnews24.com)। তাদের দৃষ্টিতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ণ হবে। বিএনপি বরং চায় সংসদীয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়া ঠিক হোক, যাতে নির্বাচিত সরকার পরোক্ষভাবে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখতে পারে (oai_citation_attribution:68‡mzamin.com)। উদাহরণস্বরূপ, বিএনপি বলেছে তারা আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন ইত্যাদিতে নিয়োগের পক্ষে – যার অর্থ এসব নিয়োগে কার্যত প্রধানমন্ত্রী/সরকারের হাতেই ক্ষমতা থাকবে (oai_citation_attribution:69‡mzamin.com)। নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিতা সংসদীয় কমিটির কাছে স্থাপন করার সুপারিশেও বিএনপির আপত্তি রয়েছে। তারা মনে করে এতে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়বে (oai_citation_attribution:70‡bdnews24.com)। বিএনপি বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছে যে নির্বাচন কমিশন বা অনুরূপ সংস্থার জবাবদিহিতা বর্তমান সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ন্যায় প্রক্রিয়ায় রাখা যেতে পারে (oai_citation_attribution:71‡bdnews24.com) – যা বিচারপতিদের অনিয়ম বিবেচনার জন্য ছিল। অর্থাৎ, সংসদীয় কমিটির বদলে উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধানে এ ধরনের সংস্থার জবাবদিহিতা রাখার পক্ষপাতী বিএনপি।

যদিও এসব বিষয়ে বিএনপি কমিশনের সাথে দ্বিমত করেছে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার বিষয়ে অনেক প্রস্তাবে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। নিম্ন আদালতগুলোকে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ তত্ত্বাবধানে এনে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার ব্যাপারে বিএনপি কমিশনের সাথে একমত (oai_citation_attribution:72‡bdnews24.com)। বিচারপতিদের জবাবদিহিতার জন্য পৃথক পরিষদ বা কমিশন গঠনের প্রস্তাবও বিএনপি সমর্থন করে, কারণ এতে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা বাড়বে (oai_citation_attribution:73‡bdnews24.com)। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার সম্পর্কিত ২০টি প্রস্তাবনার মধ্যে ১১টি পুরোপুরি এবং ৭-৮টি আংশিকভাবে মন্তব্যসহ সমর্থন করেছে বিএনপি; কেবল আয়ের উপর কর সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তনের একটি প্রস্তাব তারা বিরোধিতা করেছে (oai_citation_attribution:74‡bdnews24.com)। অর্থাৎ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিদমন ইস্যুতে বিএনপি কমিশনের সাথে অনেকাংশে একমত। তবে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের নির্বাচন করার অযোগ্য ঘোষণা করার যে প্রস্তাব কমিশন (নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে) করেছিল, বিএনপি তা স্পষ্টভাবে মানেনি (oai_citation_attribution:75‡dhakatribune.com)। কমিশন চেয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) সংশোধন করে যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আছে তারা যেন নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারে (oai_citation_attribution:76‡dhakatribune.com)। বিএনপির বক্তব্য, সংবিধান ও বিদ্যমান আইনে প্রার্থী হতে কী যোগ্যতা থাকা দরকার তা নির্দিষ্ট আছে; অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সমীচীন নয় (oai_citation_attribution:77‡dhakatribune.com)। মূলত এই প্রস্তাবটি জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের (যারা যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে অভিযুক্ত) নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে করা হয়েছে বলে বিএনপি ধারণা করে এবং তাই তারা এতে সায় দেয়নি। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলিকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনার যে প্রস্তাব সংস্কার কমিশন করেছে, বিএনপি স্বচ্ছতার স্বার্থে তাতে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে (oai_citation_attribution:78‡dhakatribune.com)। এতে দলীয় তহবিল ও কর্মকাণ্ডে জনগণের জানার অধিকার নিশ্চিত হবে।

সার্বিকভাবে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলোতে বিএনপির অবস্থান হচ্ছে – যেখানে এগুলো স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা বাড়াবে সেগুলোতে সমর্থন, কিন্তু যেখানে বিএনপির মতে নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা কমে যেতে পারে সেগুলোতে বিরোধিতা। অর্থাৎ বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে তারা সংস্কারপন্থী, কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য নিয়োগে সরকারী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পক্ষে।

তুলনামূলক সারণি: কমিশনের সুপারিশ বনাম বিএনপির অবস্থান

নিম্নের সারণিতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশসমূহের সঙ্গে বিএনপি যে অবস্থান নিয়েছে তার প্রধান পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

বিষয়কমিশনের সুপারিশবিএনপির অবস্থান
রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ মূলনীতি থেকে বাদ; বহুত্ববাদ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও গণতন্ত্র যুক্ত করার প্রস্তাব oai_citation_attribution:79‡mzamin.comমূলনীতি পরিবর্তনের বিরোধিতা; ২০১১ সালের আগে সংবিধানে যে মূলনীতি ছিল (জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র) তা পুনর্বহাল রাখার দাবি oai_citation_attribution:80‡mzamin.com
সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ইতিহাসপ্রস্তাবনায় ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সমতুল্য গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ oai_citation_attribution:81‡bdnews24.comমুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ অপরিবর্তিত রাখা ও ২০২৪ আন্দোলনের উল্লেখ প্রধান প্রস্তাবনা থেকে বাদ দেওয়া (প্রয়োজনে পৃথকভাবে উল্লেখ) oai_citation_attribution:82‡bdnews24.com
রাষ্ট্রের নাম (বাংলা)“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” থেকে পরিবর্তন করে “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” করার প্রস্তাব oai_citation_attribution:83‡bdnews24.comরাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের ঘোর বিরোধিতা – বিদ্যমান নামই বহাল রাখতে চায় oai_citation_attribution:84‡bdnews24.com
নাগরিকত্ব পরিচয়সংবিধানে নাগরিকদের পরিচয় “বাঙালি” থেকে পরিবর্তন করে “বাংলাদেশী” করার প্রস্তাব oai_citation_attribution:85‡en.wikipedia.org“বাংলাদেশী জাতীয়তা” ধারণার প্রতি সমর্থন – নাগরিক পরিচয় “বাংলাদেশী” করায় বিএনপি একমত (এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব প্রস্তাবও আছে) oai_citation_attribution:86‡en.wikipedia.org
মৌলিক অধিকার অধ্যায়নির্দেশিকার নীতি ও মৌলিক অধিকার একত্র করে নতুন অধ্যায়; খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নতুন অধিকার যুক্ত oai_citation_attribution:87‡en.wikipedia.orgসামাজিক-অর্থনৈতিক অধিকারগুলোকে একই স্তরে যুক্ত করতে আপত্তি; রাষ্ট্রের সক্ষমতা অনুসারে এসব অধিকার ধীরে সংযোজনের পক্ষে, একসাথে মিশ্রণের বিপক্ষে oai_citation_attribution:88‡bdnews24.com
সংবিধান পরিবর্তনের পদ্ধতিবড় পরিবর্তনে গণভোটের সুপারিশ; নতুন সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ গঠনের কথাও আলোচনায় এসেছে oai_citation_attribution:89‡bdnews24.comগণভোট বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন নেই (অনুচ্ছেদ ১৪২ অনুযায়ী বর্তমান ব্যবস্থাই যথেষ্ট); নতুন করে সংবিধান সভার প্রয়োজন নেই, নির্বাচিত সংসদেই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনী করতে হবে oai_citation_attribution:90‡bdnews24.com oai_citation_attribution:91‡mzamin.com
সংসদ কাঠামোদ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন – বর্তমান সংসদের পাশাপাশি ১০৫ সদস্যের নির্বাচিত/মনোনীত উচ্চকক্ষ (সিনেট) গঠন oai_citation_attribution:92‡en.wikipedia.orgদ্বিকক্ষ ব্যবস্থা সমর্থন করে না – অতিরিক্ত সংসদ (উচ্চকক্ষ) সৃষ্টির বিরোধিতা; বর্তমান এককক্ষীয় সংসদ ব্যবস্থা বহাল রাখা উচিত বলে মত oai_citation_attribution:93‡bdnews24.com
সংসদের মেয়াদসংসদ ও সরকারের মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪ বছর করার প্রস্তাব oai_citation_attribution:94‡banginews.comসংসদের পূর্ণ মেয়াদ ৫ বছরই রাখতে হবে – ৪ বছরে নামানোর বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান oai_citation_attribution:95‡banginews.com oai_citation_attribution:96‡mzamin.com
দলত্যাগ ও অনুচ্ছেদ ৭০অনুচ্ছেদ ৭০ শিথিল করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে (যেমন আস্থা ভোট) এমপিদের স্বাধীন মত প্রদান সম্ভব করার পক্ষে ব্যাখ্যা oai_citation_attribution:97‡en.prothomalo.comসাংসদদের দলের বিরুদ্ধে ভোটের স্বাধীনতা বাড়ালে অস্থিরতা বাড়বে – বিএনপি অনুচ্ছেদ ৭০ এর মূলনীতি বজায় রাখতে চায় (বড় দলে একই মত) oai_citation_attribution:98‡en.prothomalo.com
প্রধানমন্ত্রীর পদে মেয়াদসীমাএকজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২ বারই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন (আজীবনের জন্য দুটি মেয়াদ সীমা) oai_citation_attribution:99‡mzamin.comপরপর সর্বোচ্চ ২ মেয়াদ (তিনবার টানা নয়) – তবে বিরতি দিয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রিত্বের সুযোগ রাখা; আজীবন দুবারের সীমা মানে না oai_citation_attribution:100‡mzamin.com
প্রধানমন্ত্রীর দলীয় পদপ্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কোন ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না oai_citation_attribution:101‡banginews.comএ প্রস্তাবের বিরোধিতা – কারা দলনেতা ও সরকারপ্রধান হবেন তা সংশ্লিষ্ট দল নিজেই নির্ধারণ করবে; সাংবিধানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা অপ্রয়োজনীয় oai_citation_attribution:102‡banginews.com
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসংসদ ও সম্ভাব্য উচ্চকক্ষ/স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে Electoral College গঠন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন oai_citation_attribution:103‡mzamin.comবিদ্যমান পদ্ধতিই বজায় রাখার পক্ষে – সংসদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই সাংবিধানিকভাবে সঠিক, Electoral College ব্যবস্থার বিপক্ষে oai_citation_attribution:104‡mzamin.com
নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারসংসদ ভেঙে দিলে ৯০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী নিরপেক্ষ সরকার; আইন সংশোধন ও প্রশাসনিক রদবদলের ক্ষমতাসহ।নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা সমর্থন করে; তবে শুধুই রুটিন দায়িত্ব পালন করবে, কোনো আইন পরিবর্তন বা বড় পদক্ষেপ নেবে না oai_citation_attribution:105‡dhakatribune.com। প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে নতুন কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব নয় – পুরনো/সংসদীয় প্রক্রিয়াতেই সিদ্ধান্ত চায় oai_citation_attribution:106‡dhakatribune.com
নিয়োগ প্রক্রিয়া (এনসিসি)জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদল নেতা ইত্যাদি সমন্বয়ে) গঠন করে বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনারসহ সাংবিধানিক পদে নিয়োগের সুপারিশ oai_citation_attribution:107‡mzamin.comএনসিসি’র বিরোধিতা – বিএনপি চায় এসব নিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন প্রণয়ন করে নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্বে রাখতে, অনির্বাচিত কাউন্সিলের হাতে না দিতে oai_citation_attribution:108‡mzamin.com
নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিতানির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে তদন্ত ও অপসারণের প্রস্তাব oai_citation_attribution:109‡dhakatribune.comসংসদীয় কমিটির অধীন করায় বিরোধিতা – এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নষ্ট হবে; বরং বিচার বিভাগীয় পর্যায়ে (অনুচ্ছেদ ৯৬ অনুযায়ী) জবাবদিহিতা থাকা উচিত বলে মত oai_citation_attribution:110‡bdnews24.com
বিচার বিভাগীয় সংস্কারনিম্ন আদালতগুলোকে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাধীন করা; বিচারপতিদের জবাবদিহিতায় পৃথক কাউন্সিল গঠন ইত্যাদি oai_citation_attribution:111‡bdnews24.comএ ধরনের বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে বিএনপির পূর্ণ সমর্থন – নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টে দেয়া ও বিচারপতি নিয়োগ-শৃঙ্খলায় আলাদা ব্যবস্থা গঠনে সম্মতি oai_citation_attribution:112‡bdnews24.com
দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনিক সংস্কারদুদকসহ বিভিন্ন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও কাঠামোগত সংস্কার (বিভাগীয় পদোন্নতিতে মেধার ভিত্তিতে বোর্ড ইত্যাদি)।অধিকাংশ প্রস্তাবে সমর্থন – বিএনপি ২০টির মধ্যে ১১টিতে সম্মতি ও বাকীগুলোতেও আংশিক সম্মতি দিয়েছে; মাত্র ১টি (কর আই সংশোধন) প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে oai_citation_attribution:113‡bdnews24.com
প্রার্থিতায় নিষেধাজ্ঞাযুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধকরণের প্রস্তাব oai_citation_attribution:114‡dhakatribune.comবিএনপির বিরোধিতা – দলটির মতে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা অপ্রয়োজনীয়, বিদ্যমান আইনেই প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারিত হওয়া উচিত oai_citation_attribution:115‡dhakatribune.com

উপরের সারণি থেকে স্পষ্ট, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কমিশন ও বিএনপি সম্পূর্ণ বিপরীত মত পোষণ করছে, আবার কিছু বিষয়ে বিএনপি কমিশনের সাথে আংশিক বা পূর্ণ ঐকমত্যও প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে আদর্শিক ও কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে মতপার্থক্য বেশি, আর প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির কিছু প্রস্তাবে সমঝোতা রয়েছে।

উপসংহার

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা এবং বিএনপির প্রদত্ত মতামতের তুলনামূলক পর্যালোচনা থেকে বোঝা যায় যে রাষ্ট্রপরিচালনার বিভিন্ন মূল দিক নিয়ে দুটি পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্ন। কমিশন যেখানে রাষ্ট্রের পরিচিতি ও কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন এবং ক্ষমতার ভারসাম্য পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, বিএনপি সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা অথবা পূর্বের প্রথা বজায় রাখতে চায়। বিশেষ করে মৌলিক রাষ্ট্রিয় আদর্শ, সরকার প্রধানের ক্ষমতা ও মেয়াদ, এবং সংসদীয় কাঠামো নিয়ে বিএনপি পরিবর্তনের ব্যাপারে সন্দিহান ও রক্ষণশীল অবস্থানে আছে (oai_citation_attribution:116‡mzamin.com oai_citation_attribution:117‡mzamin.com)। তাদের আপত্তি হলো এ ধরনের পরিবর্তনগুলো যেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতামত ও জনমতের সম্মতি ছাড়া চাপিয়ে না দেওয়া হয় (oai_citation_attribution:118‡bdnews24.com)। অন্যদিকে, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতিদমন সংক্রান্ত প্রস্তাব, যেগুলো রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও সুশাসন মজবুত করে, সেগুলোতে বিএনপির উল্লেখযোগ্য সমর্থন লক্ষ্য করা যায় (oai_citation_attribution:119‡bdnews24.com oai_citation_attribution:120‡bdnews24.com)।

প্রকৃতপক্ষে, কমিশনের সুপারিশ ও বিএনপির অবস্থানের এই পার্থক্যগুলো বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। একটি অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশে সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলের সহযোগিতা ও সম্মতি রাষ্ট্রিয় স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। তাই কোন কোন ইস্যুতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং কোথায় মতবিরোধ রয়ে গেছে, সেই চিত্রটি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। উপর্যুক্ত বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই যে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতিদমন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছুটা ঐক্য থাকলেও রাষ্ট্রের মূলনীতি, সংসদীয় সংস্কার, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। সরকারী নথি, সংসদীয় বিবৃতি, নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম এবং কমিশনের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি থেকে নেওয়া এই তথ্যগুলোর ভিত্তিতে বলা যায় যে ভবিষ্যতে যে কোনো সাংবিধানিক সংস্কার কার্যক্রমে এসব মতপার্থক্য দূর করতে রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতা দরকার হবে (oai_citation_attribution:121‡bdnews24.com oai_citation_attribution:122‡newagebd.net)। জনগণের বোঝার সুবিধার্থে উপরে বর্ণিত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কমিশন বনাম বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি তুলনা করে দেখানো হয়েছে। এই পার্থক্যগুলো বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে বিএনপি মূলত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কিছু প্রস্তাবনা বাদ দিয়ে বাকী অনেক সংস্কার বিষয় পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে চাইছে (oai_citation_attribution:123‡newagebd.net)। অপরপক্ষে কমিশন জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে আগ্রহী। সর্বোপরি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা ও বিএনপির অবস্থান পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সাংবিধানিক পরিবর্তনের রূপরেখা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

সুত্রসমূহ: সরকারী কমিশনের প্রতিবেদন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দলিল, প্রাসঙ্গিক সংবাদ প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ। উল্লিখিত সকল তথ্য নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে গৃহীত এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে উপরে আনুপাতিক সূত্রসহ উল্লেখ করা হয়েছে। জনগণের কাছে বিষয়টি সহজবোধ্য করতে প্রতিবেদনটিতে তুলনামূলক উপস্থাপন ও সুসংগঠিত কাঠামো অনুসরণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে সাম্প্রতিক সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব ও বিএনপি-র অবস্থান সংক্রান্ত একটি স্বচ্ছ চিত্র পাঠকরা লাভ করবেন। (oai_citation_attribution:124‡banginews.com oai_citation_attribution:125‡bdnews24.com)।

সারসংক্ষেপ

  • প্রস্তাবিত পরিবর্তনের লক্ষ্য: সংবিধান সংস্কার কমিশন (কমিশন) রাষ্ট্রব্যবস্থায় আদর্শিক, কাঠামোগত ও প্রশাসনিক বিভিন্ন পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা।
  • রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি: কমিশন ১৯৭২ সালের মূল চার নীতিতে (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা) ব্যাপক সংশোধন আনার পক্ষে; অন্যদিকে বিএনপি বর্তমান বা পূর্বতন নীতিসমূহ বহাল রাখতে চায়।
  • রাষ্ট্রের নাম ও নাগরিকত্ব: কমিশন “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” বদলে “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” করার পাশাপাশি নাগরিক পরিচয় “বাঙালি” থেকে “বাংলাদেশী” করতে চায়; বিএনপি নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করলেও নাগরিক পরিচয় “বাংলাদেশী” করাকে সমর্থন করে।
  • মৌলিক অধিকার: কমিশন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের আইনি স্বীকৃতি চায় এবং বড় কোনো সাংবিধানিক সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রস্তাব করেছে; বিএনপি এই অধিকারগুলোকে একীভূত করার ব্যাপারে সতর্ক এবং বাধ্যতামূলক গণভোটের দরকার নেই বলে মনে করে।
  • সংসদ কাঠামো: কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের (উচ্চকক্ষ + নিম্নকক্ষ) পক্ষে যুক্তি দিয়েছে, সংসদের মেয়াদ ৪ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে; বিএনপি দ্বিকক্ষ ব্যবস্থা ও মেয়াদ কমানোর বিপক্ষে, বর্তমান এককক্ষীয় সংসদ ও ৫ বছর মেয়াদ রাখতে চায়।
  • প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও মেয়াদ: কমিশন একজন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুইবারের সীমা আরোপের পক্ষে; বিএনপি বলে টানা দুইবারের বেশি নয়, তবে বিরতি দিয়ে আবার হওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদ আলাদা রাখার কমিশনের প্রস্তাবও বিএনপি মানেনি।
  • রাষ্ট্রপতি ও নির্বাহী ভারসাম্য: কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে Electoral College ব্যবস্থার ও তার মেয়াদ ৪ বছর করার কথা বলেছে; বিএনপি বলছে বিদ্যমান সংসদীয় পদ্ধতিতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন যথেষ্ট, ৫ বছরের মেয়াদই ঠিক আছে।
  • নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার: কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে আইন সংশোধন ও প্রশাসনিক রদবদলের ক্ষমতা চায়; বিএনপি কেবল ‘নিয়মিত দায়িত্ব’ পালনের পক্ষপাতী এবং প্রধান উপদেষ্টা বা সদস্য বাছাইয়ে নতুন কাউন্সিল নয়, বরং পুরনো পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দিতে চায়।
  • বিচার বিভাগ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া: কমিশন বিচার বিভাগকে নির্বাহী থেকে আলাদা করা, বিচারপতি ও সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (NCC) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে; বিএনপি কাউন্সিলের বিরোধিতা করে নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায়, তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কিছু পদক্ষেপে একমত।
  • দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনিক সংস্কার: বেশিরভাগ প্রস্তাবে বিএনপি সমর্থন করেছে; কিছু কর ও শাস্তিমূলক আইনের সংশোধনীতে আপত্তি জানিয়েছে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের নির্বাচন অযোগ্য করার প্রস্তাব কমিশন দিলেও বিএনপি সেটিকে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ মনে করে।
  • সার্বিক চিত্র: কমিশন কাঠামোগত ও আদর্শিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার চাইলেও বিএনপি অনেক বিষয়ে রক্ষণশীল অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতা ও মেয়াদ সংক্রান্ত বিধিনিষেধে আপত্তি বেশি; তবে বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিদমনে তারা কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে আংশিক বা পূর্ণ ঐকমত্য প্রকাশ করেছে।

Discover more from LK INNOVATE

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a comment

Trending

Discover more from LK INNOVATE

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading