ড. লোকমান খান, বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ

  1. ১. ভূমিকা
  2. ২. মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানশিক্ষার গুরুত্ব
    1. ২.১ বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা: সময়ের দাবি
    2. ২.২ স্বনির্ভর ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারা গড়ে তোলা
    3. ২.৩ ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা
  3. ৩. বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞান শিক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
    1. ৩.১ বৃহত্তর চ্যালেঞ্জসমূহ
    2. ৩.২ পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও সুযোগ
  4. ৪. উন্নয়নের প্রস্তাবনা
    1. ৪.১ শিক্ষা পদ্ধতিতে আধুনিকীকরণ
    2. ৪.২ শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন
    3. ৪.৩ সমন্বিত সহযোগিতা
  5. ৫. উপসংহার
    1. ৫.১ সামনের দিনগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরো দৃঢ় ও ফলপ্রসূ করে তুলতে স্কুলের ভূমিকা
    2. ৫.২ আহ্বান ও প্রত্যয়
    3. তথ্যসূত্র
    4. References

১. ভূমিকা

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ারগুলোর একটি হলো বিজ্ঞান শিক্ষা। আধুনিক বিশ্বে প্রতিদিন নতুন প্রযুক্তি, আবিষ্কার ও উদ্ভাবন ঘটছে। এ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে গড়ে তুলতে হবে এমনভাবে, যাতে তারা আগামী দিনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এই নিবন্ধে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব, চলমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতে উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অনেক দিন থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন—একটা জাতির সামগ্রিক অগ্রগতি, অর্থনৈতিক বিকাশ এবং সামাজিক উন্নয়নে বিজ্ঞানশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ তার “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার জোরালো বিকাশ অন্যতম। এ নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জনগণকে জানানো যে, মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষা শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য নয়; বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং আত্মনির্ভরশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

২. মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানশিক্ষার গুরুত্ব

২.১ বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা: সময়ের দাবি

বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া কোনো দেশেরই উন্নতি স্থায়ী করা কঠিন। তথ্যপ্রযুক্তি, জিন প্রকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষি, শিল্প—সব খাতেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ ও অবদান অমূল্য। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মক্ষেত্র দিন দিন বাড়ছে। দেশের যেকোনো ক্ষেত্রেই এখন কম্পিউটার জ্ঞান, ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কিংবা আধুনিক যন্ত্রপাতি চালানোর দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সুতরাং মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থার ভিত না গড়ে তুললে, উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত জীবনে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার শিক্ষা খাতে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রযুক্তি-নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষা জোরদার করা জরুরি।

২.২ স্বনির্ভর ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারা গড়ে তোলা

বিজ্ঞান শেখার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো যৌক্তিক ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ানো। যখন শিক্ষার্থীরা কোনো বিজ্ঞানের সূত্র, নিয়ম বা প্রক্রিয়া শেখে, তখন তারা মূলত সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রসায়নের পরীক্ষাগারে হাতে-কলমে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করলে বইয়ে পড়া তথ্য বাস্তবের সাথে মিলিয়ে দেখা যায়; এটি শুধু মুখস্থবিদ্যা নয়, বরং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাকেও বাড়ায়।

এভাবে উদ্ভাবনী ভাবনা ও গবেষণামূলক মনোভাব তৈরি হয়। কেউ ভবিষ্যতে কৃষি প্রকৌশলী হতে পারে, কেউ বা বায়োটেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পারে—কিন্তু সেই বীজ রোপন করতে হবে মাধ্যমিক পর্যায়েই। তাই বিজ্ঞানশিক্ষা আমাদের উদ্ভাবনী ভবিষ্যৎ নাগরিক গড়ে তুলতে একান্ত জরুরি।

২.৩ ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা

শুধু পেশাগত ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনযাপনেও বিজ্ঞানের প্রভাব দৃশ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন—এ সবকিছুতেই বিজ্ঞানের ভূমিকা বিরাট। আবার পরিবেশ রক্ষা বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞানের জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত প্রয়োজন।

বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে উঠলে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিজ্ঞান-নির্ভর শিল্প, রফতানি বৃদ্ধি, নতুন পণ্য উদ্ভাবন—সবখানেই প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানমনস্ক জনশক্তির দরকার। ফলে কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে দেশে একটি সমৃদ্ধ, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর কর্মপরিবেশ গড়ে ওঠে।

৩. বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞান শিক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ

৩.১ বৃহত্তর চ্যালেঞ্জসমূহ

১) আধুনিক ল্যাব ও উপকরণের ঘাটতি: এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৩৪% মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষণাগার বা ল্যাব ঠিকমতো চালু আছে। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে ল্যাব নেই, কিংবা থাকলেও উপকরণ অপ্রতুল বা পুরনো। ফলে হাতে-কলমে পরীক্ষা করার সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিখে থাকে অনেকটাই শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ জ্ঞান।

২) প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও গবেষণার অভাব: মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে প্রায় ৬০ হাজারের মতো শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষককেই একাধিক বিষয় দেখতে হয় বা বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়াই ক্লাস নিতে হয়। এর সঙ্গে নিয়মিত প্রশিক্ষণের অভাব জড়িত; ফলে শিক্ষকরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন পদ্ধতিতে পড়াতে পারেন না।

৩) মুখস্থ নির্ভর শিক্ষাক্রম: অনেক দিন ধরেই বোর্ড পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে মুখস্থবিদ্যার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষাও অনেক সময় আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে। তাই শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানকে শুধু বই-পুস্তকের তথ্যের মধ্যে আবদ্ধ রাখে, ব্যবহারিক গবেষণা বা বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে না।

৩.২ পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও সুযোগ

ক) সরকারি নীতি ও শিক্ষাক্রম সংস্কার: ২০২৩-২০২৫ সময়কালের মধ্যে সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে, যেখানে জ্ঞান-ভিত্তিক ও দক্ষতামুখী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এখানে মুখস্থ নির্ভরতা কমিয়ে বাস্তবমুখী ও কার্যক্রম-ভিত্তিক পাঠদানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিখতে পারে।

খ) বেসরকারি খাত ও আলুমনি নেটওয়ার্ক: অনেক এনজিও ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী সংগঠন বিজ্ঞান ল্যাব উন্নতকরণ এবং বিজ্ঞান ক্লাব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে। “Promoting Science Education (PSE)” কিংবা বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (BFF)-এর মত সংস্থা গ্রামাঞ্চলের স্কুলে বিজ্ঞান উপকরণ পাঠাচ্ছে ও বিজ্ঞান শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর ফলে অল্প হলেও সাধারণ স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা শেখার সুযোগ পাচ্ছে।

গ) ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম: “ডিজিটাল বাংলাদেশ” উদ্যোগের অধীনে ইতিমধ্যে ৩৩,০০০-এর বেশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ১১,০০০-এর বেশি কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ডিজিটাল রিসোর্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ল্যাব বা অনলাইন সিমুলেশন ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি ছাড়াই নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চর্চা করতে পারে। এছাড়া মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (যেমন: মুক্তপাঠ, 10 Minute School) ইত্যাদিতে বিজ্ঞানের কনটেন্ট পাওয়া যায়, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারকে গতিশীল করে তুলছে।

৪. উন্নয়নের প্রস্তাবনা

৪.১ শিক্ষা পদ্ধতিতে আধুনিকীকরণ

১) বাস্তবমুখী, কার্যক্রমভিত্তিক পাঠদান: শুধু বই পড়ে মুখস্থ না করিয়ে, শিক্ষার্থীকে নিজে পরীক্ষানিরীক্ষা করার সুযোগ দিতে হবে। ছোট ছোট প্রকল্প, মডেল তৈরি, মুক্তচিন্তামূলক আলোচনা—এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সত্যিকারের বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠতে পারে।

২) অনলাইন লার্নিং রিসোর্স ও মাল্টিমিডিয়া: এখন অনেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সহজলভ্য। শিক্ষকরাও ইউটিউব বা অনলাইন কোর্সের সাহায্যে নতুন বিষয়াদি শিখে ক্লাসে প্রয়োগ করতে পারেন। বাস্তব উদাহরণ বা অ্যানিমেশন দেখালে শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু বোঝা সহজ হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বাড়তি ইন্টারনেট সহযোগিতা বা ডিভাইস সহায়তা পাওয়া গেলে দূরবর্তী বিদ্যালয়গুলোও এ সুবিধা নিতে পারবে।

৪.২ শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন

১) বিজ্ঞান-শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ: শিক্ষক ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি যাঁরা বর্তমানে চাকরিতে আছেন, তাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। নতুন পাঠ্যক্রম এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে আপডেট থাকতে হবে। “Teacher Quality Improvement (TQI)” বা অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ উদ্যোগ আরও বাড়ানো উচিত।

২) উপযুক্ত ল্যাব ও সামগ্রী নিশ্চিত করা: গবেষণাগারে হাতে-কলমে কাজ করতে না পারলে বিজ্ঞান শেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত ল্যাবসামগ্রী, রাসায়নিক, প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে অন্তত প্রত্যেক স্কুলে একটি আধুনিক বিজ্ঞানাগার গড়ে তোলার লক্ষ্য নেওয়া দরকার।

৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ: যেসব জায়গায় ল্যাব আছে, সেগুলো যেন দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারযোগ্য থাকে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ হয়, সে দিকটাও গুরুত্ব সহকারে দেখা জরুরি। ল্যাবের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা বরাদ্দ বা স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী থাকা দরকার।

৪.৩ সমন্বিত সহযোগিতা

১) প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কমিউনিটি: অনেক সময় আলুমনি নেটওয়ার্কের সহায়তায় স্কুলের জন্য ফান্ড, ল্যাব যন্ত্রপাতি বা স্কলারশিপ সংগ্রহ করা যায়। স্থানীয় কমিউনিটি বিশেষভাবে এগিয়ে এলে বিজ্ঞানমুখী কার্যক্রম যেমন—বিজ্ঞান মেলা, প্রদর্শনী, STEM প্রতিযোগিতা—আয়োজনে আর্থিক ও সংগঠনিক সহায়তা বাড়ে।

২) বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকল্প: সরকারের একার পক্ষে সব দিক সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জিং। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, এনজিও বা কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (CSR) প্রকল্পের মাধ্যমে ল্যাব আধুনিকীকরণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন করা সম্ভব। এ ধরনের সহযোগিতার একটি সুসমন্বিত কাঠামো গড়ে তোলা দরকার, যাতে প্রকল্পগুলো overlapping না হয়ে সর্বোচ্চ কার্যকরী হয়।

৫. উপসংহার

৫.১ সামনের দিনগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরো দৃঢ় ও ফলপ্রসূ করে তুলতে স্কুলের ভূমিকা

বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি ও ভবিষ্যৎ গঠনে বিজ্ঞান শিক্ষার অবদান অস্বীকার করা যায় না। সঠিক ল্যাব, প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও ব্যবহারিক শিক্ষাপদ্ধতি যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে শিখবে। এর পর উচ্চতর পর্যায়ে গিয়ে কেউ বস্তুনিষ্ঠভাবে গবেষণা করতে আগ্রহী হবে, কেউ কৃষি বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন উদ্ভাবনের পথ খুঁজবে, আবার কেউ তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন সফটওয়্যার বা সেবা তৈরি করে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করবে।

৫.২ আহ্বান ও প্রত্যয়

প্রতিটি স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এখনই বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব বুঝে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি সরকারের নীতি-নির্ধারক, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় সমাজের সমন্বিত প্রয়াসে বিজ্ঞান শিক্ষার আধুনিকীকরণ সম্ভব।

অন্যদিকে শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা ধরে রাখতে পারেন। বিজ্ঞানকে ভয়ের বিষয় না বানিয়ে মজার, অনুসন্ধিৎসু ও বাস্তবমুখী একটি সাবজেক্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে আগামী দিনের Bangladesh হবে গবেষণা ও উদ্ভাবন-ভিত্তিক একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ”-এর পরবর্তী স্বপ্ন হলো “স্মার্ট বাংলাদেশ”—এ পথচলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষা হবে আমাদের সবচেয়ে দৃঢ় সোপান। ভবিষ্যতের চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, গবেষক এমনকি সচেতন নাগরিক সকলকেই আজকের বিজ্ঞান ক্লাসে গড়ে তুলতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে অঙ্গীকার করি—আগামীর বাংলাদেশকে একটি বিজ্ঞানপ্রিয় এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে বিজ্ঞান শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

তথ্যসূত্র

আর্টিকেলে ব্যবহৃত তথ্যমালা মূলত বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও BANBEIS (বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশন ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস)-এর বিভিন্ন প্রতিবেদন ও তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। পাশাপাশি UNESCO, UNICEF এবং স্থানীয় শিক্ষাবিষয়ক এনজিওগুলোর বিশ্লেষণও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য রেফারেন্সের মধ্যে রয়েছে Bangladesh Education Statistics 2022 প্রতিবেদন, UNESCO-এর নীতিমালা পর্যালোচনা, BANBEIS/DSHE-এর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সংক্রান্ত তথ্য এবং বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞান শিক্ষার অবকাঠামো বিষয়ক গবেষণাপত্র। Dhaka Tribune, New Age, Daily Star সহ বিভিন্ন জাতীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে সাম্প্রতিক পরীক্ষার ফলাফল ও সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব হালনাগাদ ও প্রামাণ্য সূত্র বাংলাদেশে ২০২৫ সাল নাগাদ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষার সার্বিক চিত্র স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে।

References

1. Bangladesh Education Statistics 2022. Government of the People’s Republic of Bangladesh.
https://banbeis.gov.bd/sites/default/files/Bangladesh_Education_Statistics_2022.pdf
2. Directorate of Secondary & Higher Education (DSHE). (2021).
Teacher Quality Improvement (TQI) Project Details. Ministry of Education, Government of Bangladesh.
https://dshe.gov.bd/tqi-project
3. UNESCO. (2020).
Policy Review: Strengthening Science Education in Bangladesh.
https://unesdoc.unesco.org/ark:/48223/pf0000379016
4. UNICEF. (2019).
Enhancing Secondary Science Education in Bangladesh: A Situational Analysis.
https://www.unicef.org/bangladesh/secondary-science-education
5. Bangladesh Freedom Foundation (BFF). (2021).
Science Education Infrastructure in Bangladesh: A Baseline Study.
http://bffbd.org/science-education-infrastructure-study
6. Dhaka Tribune. (2023, June 15).
SSC 2023: Science group sees highest pass rate again.
https://www.dhakatribune.com/bangladesh/education/ssc-science-pass-rate
7. New Age. (2025, January 10).
Teacher shortage remains a major obstacle for science education, experts say.
https://www.newagebd.net/article/teacher-shortage-science-education
8. The Daily Star. (2024, August 10).
Govt to invest more in digital classrooms: Education minister.
https://www.thedailystar.net/country/news/govt-invest-digital-classrooms-1289309


Discover more from LK INNOVATE

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a comment

Trending

Discover more from LK INNOVATE

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading